• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
স্কুল মিল্ক ফিডিং হতে পারে এক অনন্য উদ্যোগ

প্রাথমিক পর্যায়ে পুষ্টি সেবা নিশ্চিতকরণ

প্রাথমিক পর্যায়ে পুষ্টি সেবা নিশ্চিতকরণ

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চকদিগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান

মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান

প্রাথমিক শিক্ষা হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল ভিত্তি। এ শিক্ষার ভিতকে শক্তিশালী করতে হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের বিষয়ে অধিকতর গুরুত্বারোপের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল বিশ্বের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। পৃথিবীর ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে কাঙ্খিত উন্নত দেশে পরিণত হবার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানে নেতৃত্ব দেবে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা। তাই শিশুদের মনোবিকাশ ও শারীরিক বৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে এখনই যথাযথ পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলসমূহে কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত বা বেসরকারী উদ্যোগে মিড ডে মিল চালু থাকলেও প্রকৃত ও গুণগত পুষ্টি সেবার বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। সুষম খাবার সরবরাহ নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বিকল্প নেই। শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চতকরণে অভিভাবকসহ প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ একটি অংশ এখনো চরম মাত্রায় উদাসীন। বয়স অনু্যায়ী সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য শিশুরা যদি না পায়, তাহলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দৃশ্যমান হতে থাকে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ডায়েটিশিয়ান নিযুক্ত করা আছে, যারা শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি এবং যথাযথ খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ, মনিটর ও ফলোআপ করে থাকেন।

বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেল, হাইটেক পার্কসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এবার সময় এসেছে নতুন প্রজন্মকে মেধাবী ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সুস্থ সবল, কর্মঠ এবং দক্ষ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় জুন ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের ৬১টি জেলার ৩০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিদিন ২০০ মিলিলিটার দুধ খাওয়ানো কর্মসূচি 'স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচি' চালু হয়েছে, যা আগামী জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে।

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ওজন, দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বুদ্ধিমত্তা স্কুল মিল্ক ফিডিং এর আগে ও পরে তুলনা করে পর্যালোচনা করা হবে। দুধ একটি আদর্শ খাবার, এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ছয়টি উপাদানই বিদ্যমান। শরীরের জন্য অপরিহার্য ল্যাকটোজ দুধ থেকে সহজেই পাওয়া যায়। এ ধরনের প্রকল্পে দুধের সাথে কলা ও ডিম সংযোজন করতে পারলে পুষ্টির প্রায় ষোল আনাই পূর্ণ হবে। সদাশয় সরকার এ বিষয়ে যুগোপযোগী ও খুবই প্রয়োজনীয় এ মহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। স্কুল মিল্ক ফিডিং কর্মসূচির আওতায় সরেজমিনে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খান মরিচ ইউনিয়নের চকদিগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা ক্লাশে অধিকতর মনোযোগ ও আগ্রহের সাথে অংশগ্রহণ করছে। একই সাথে বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে।

বিনামূল্যে প্রতিদিন দুধ পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে এবং বিদ্যালয়টিতে প্রাণচাঞ্চল্য ও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। পরিশেষে এ সহজ বিষয়টি অনুধাবনীয় যে, মেধাবী ও আত্ম নির্ভরশীল জাতি গঠনে চাহিদা অনুযায়ী বয়স ভিত্তিক পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলকে সামষ্টিক প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে পুষ্টি সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

লেখক : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভাঙ্গুড়া, পাবনা।
ইমেইল: nahidh223@gmail.com

০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪৭এএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।