• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশ কনস্টেবল রহিমদের না বলা কথা!

পুলিশ কনস্টেবল রহিমদের না বলা কথা!

প্রতিকী ছবি

তাহাজীব হাসান

ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের ট্রেনে ছুটে চলছি। ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটছে যেন ধূমকেতুর গতিতেই। স্টেশন থেকে শুরু করে ট্রেনে উঠে আমার সিটে বসার আগ পর্যন্ত আমি সবকিছু খেয়াল করে দেখছি। এটা আমার অভ্যাসও বলা যায়। নানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে মানুষ ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী। আমিও একজন। এই ট্রেনে কত রকমের মানুষ দেখছি। 

যাত্রীদের কেউ পত্রিকার পাতায় বুদ হয়েছেন, কেউ বই পড়ছেন। তবে বেশি মানুষ ব্যস্ত মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। আমি নিজের সিটে বসে আছি। দেখলাম, কয়েকজন পুলিশ সদস্য বগির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকক্ষণ তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলাম। নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলাম। এরপর জিজ্ঞেস করলাম, আপনার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কোথাও বসুন।

এসময় পুলিশ কনস্টেবল রহিম (ছদ্মনাম) জানান, ট্রেনে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের (এসআই) নেতৃত্বে চারজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করে। ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে পুলিশ সদস্যদের টানা ১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। ট্রেনে থাকাকালীন দীর্ঘ সময় পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ট্রেনে সামান্য সময়ের জন্যও পুলিশের বসার কোনো নির্ধারিত স্থান নেই। এমনকি বাড়তি সময় দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যরা ওভারটাইম বা বাড়তি কোনো আর্থিক সুবিধাও পান না। কিন্তু রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওভারটাইমের জন্য ঠিকই বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন।

কনস্টেবল রহিমের কথা শেষ হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত কষ্ট করেন, চাইলেও তো অন্য কোথাও ডিউটি ম্যানেজ করতে পারেন। উত্তরে কনস্টেবল রহিম বলেন, পুলিশ মানুষের জন্য কাজ করে। সকল পুলিশ সদস্যই মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। পুলিশ সদস্যরা বড় বড় উৎসবে নিজেদের পরিবারকে বঞ্চিত করেও দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও সেবায় নিয়োজিত থাকে। আমরা পুলিশে চাকরি নিয়েছি, তাই দাঁড়িয়ে থাকা  বা বসে থাকাটা কোনো বিষয় মনে হয় না। আমরা মনে করি, মানুষ সেবা পাচ্ছে কিনা। জনগণ ও দেশের কল্যাণে আমরা কষ্ট করে যাচ্ছি।

কনস্টেবল রহিমের কথায় আমার বুক শীতল হয়ে উঠল। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার মনে হলো, রহিমদের মতো মানুষ আছে বলেই হয়তো এখনো পুলিশের ওপর ভরসা আছে মানুষের। এখনো পুলিশ জনগণের বন্ধু।

তারপরেও আমার কিছু কথা থেকেই যায়। পুলিশ সদস্যরা কত কষ্ট করে, কত ত্যাগ স্বীকার করে তারা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়। পুলিশ মানুষের সেবায় সর্বদা সোচ্চার। ঈদ, পূজা কিংবা বড় কোনো উৎসবে পুলিশ ঘরে ফেরে না। পরিবার, সন্তান, বাবা-মায়ের কাছে পুলিশ সদস্যরা চাইলেই ফিরতে পারেন না। তাদের মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে যায়। পুলিশ আছে বলেই আমরা এখনো রাতে ঘুমাই বেশ নিশ্চিন্তে।

তবে আমি মনে করি, পুলিশ সদস্যদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরোও সদয় হওয়া দরকার। দায়িত্বপালন কালে পুলিশ সদস্যরা যেন অমানবিক পরিস্থিতিতে না পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। পুলিশ সদস্যরা আমাদেরই ভাই-বোন। অতিরিক্ত দায়িত্বপালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে। তবেই তো আরও স্মার্ট ও সামর্থ্যবান পুলিশিং সেবা পাবে মানুষ।

 

লেখক: মো: তাহাজীব হাসান তালুকদার
সম্পাদক
দৈনিক আমরাই বাংলাদেশ

১৯ মার্চ ২০২৩, ০৬:১৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।