• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যা মামলায় কথিত প্রেমিক গ্রেফতার

স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যা মামলায় কথিত প্রেমিক গ্রেফতার

ছবি- গ্রেফতার বিজয় রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুন্সিগঞ্জে আলোচিত স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসি (১৬) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিজয় রহমানকে (১৯) গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেফতার বিজয় রহমান নিহত জেসিকার কথিত প্রেমিক বলে জানিয়েছে র‌্যাব। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে বিজয় রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফিং করেন র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

ব্রিফিংয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় গোপনে আরেক মেয়েকে বিয়ে করেন বিজয় রহমান। এতে বাধা দেয় জেসি। আবিদার মোবাইল ফোনে বিজয়ের সঙ্গে তার প্রেম সম্পর্কিত কথোপকথনের বেশকিছু স্ক্রিনশটসহ ম্যাসেজ পাঠায় জেসিকা। এ নিয়ে আবিদা-বিজয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এঘটনার পর কথিত প্রেমিক বিজয় রহমান মীমাংসার কথা বলে বাসার ছাদে ডেকে স্ত্রী আবিদার সহযোগিতায় জেসিকাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসিকা মাহমুদ জেসির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব-৩। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যা মামলার আসামি বিজয় রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বিজয় রহমান মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আরিফুজ্জামান আরিফের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্কুলছাত্রী জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে বিজয় রহমান।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আবিদা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় বিজয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সঙ্গেও সে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর মধ্যেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবিদাকে গোপনে বিয়ে করে বিজয়। বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় জেসি। পরে আবিদার ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রিনশট পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বিজয় ও আবিদার মাঝে দাম্পত্য কলহ, কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বিজয় রহমান র‌্যাবকে জানায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জেসিকে উচিত শিক্ষা দিতে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে আলোচনা করে বিজয়। পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১ জানুয়ারি বিকেলে বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে আবিদা। সেখানে আবিদার উপস্থিতিতে বিজয় ও জেসির মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বিজয়-আবিদা মিলে জেসির গলা টিপে শ্বাসরোধে অজ্ঞান করে।

পরিস্থিতি বুঝে জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছে মর্মে নাটক সাজায় আবিদা ও বিজয়। দুজনে মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে আসে। পরে রাস্তার পাশে জেসিকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন বিজয়ের চাচা। পরে বিজয় ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে।

একপর্যায়ে বিজয় ও তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জেসিকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেসির মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে র‌্যাবের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় বিজয় ও আবিদাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জেসির ভাই। মামলা রুজুর পর ৪ জানুয়ারি আবিদাকে গ্রেফতার করা হয়।

হত্যার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জেসির সঙ্গে প্রেম সম্পর্কিত তথ্য, স্ক্রিনশর্ট পেয়ে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় বিজয়ের। বিষয়টি মীমাংসা ও উচিত শিক্ষা দিতেই স্ত্রীর যোগসাজশে বাসার ছাদে ডেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জেসিকে। গ্রেফতার বিজয় রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।