• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী করতে চান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার

কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী করতে চান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পর্যটন নগরী কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার। ১৩ আগস্ট তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রাশসন মন্ত্রণালয়।

যুগোস্লাভ সেন্টার ফর হায়ার নেভাল স্টাডিজ (বর্তমান ক্রোয়েশিয়ার স্প্লিট শহর) ১৯৮৬ সালে ও যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ১৯৮৯ সালে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে দেশে ফিরেন তিনি।

নৌ বাহিনীতে থাকাকালে বহরে বিভিন্ন কমান্ড ও স্টাফ নিয়োগের দায়িত্ব পালন করেন এই চৌকস নৌবাহিনী কর্মকর্তা। সামরিক কর্মকর্তা নুরুল আবছার ৩৮ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি নৌ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নীতি প্রণয়ন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদানের জন্য তাকে সম্মানিত পিচ টাইম পদক প্রদান করা হয়।

২০১৫ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে আদিবাসীদের স্থায়ী ফোরামে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ঢাকার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (ইওওঝঝ) এর একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।

অতিথি বক্তা হিসাবে তিনি শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোতে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ফাউন্ডেশনে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ-এনডিসির ওয়ার কোর্স, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, নেভাল একাডেমি, পুলিশ স্টাফ কলেজসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের খণ্ডকালীন শিক্ষক।

এছাড়াও তিনি দিল্লিতে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও সিঙ্গাপুরের রাজা রত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে "বাংলাদেশের অপ্রচলিত নিরাপত্তা" ও ‘‘বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন’’ বিষয়ে মূল বক্তা ছিলেন।

সাবেক এই কমোডর জাতিসংঘের অভিজ্ঞ একজন শান্তিরক্ষকও। লাইবেরিয়া ও রুয়ান্ডায় বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ডেপুটি চিফ অপারেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জাতিসংঘ মিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি-এসআরএসজিকে সহায়তা করেন। এই সময়ে উল্লিখিত দেশগুলোর উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআর, ইউএনএফপি, এমএসএফ, রেড ক্রস এবং অন্যান্য স্বনামধন্য আইএনজিও-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে প্রশংসা কুড়ান।

সাবেক এই কমোডর সাইবার ও পারমাণবিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সাইবার নিরাপত্তা ও ভৌত নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির একজন সদস্য তিনি।

তিনি স্কলারশিপ পেয়ে মার্শাল টিটো যুগোস্লাভ সেন্টার ফর হায়ার নেভাল স্টাডিজ থেকে ইলেকট্রনিক্সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্মানের সাথে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।

১৯৮৮ সালে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ইলেকট্রনিক্স এন্ড ওয়েপন অ্যাপ্লিকেশনে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কোর্সে অবদান রাখায় যুক্তরাজ্যের ফার্স্ট সি লর্ডের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র পান তিনি।

১৯৯৭ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর এবং ডিএসসিএসসি, মিরপুর থেকে স্টাফ কোর্স করেন। ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের ট্রিনিটি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে সম্মানের সাথে এমবিএ সম্পন্ন করেন।

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের একজন পিএইচডি ফেলো।

২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নৌবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ চালিয়ে যান। এ ছাড়া তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের ফ্যাকাল্টি সদস্য ছিলেন।

২০১৬ সাল থেকে তিনি ঢাকার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেখানে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল, কমোডর, যুগ্ম সচিব এবং অন্যদের এমফিল থিসিস প্রকল্পের একজন অনুষদ সদস্য ছিলেন।

কউকের নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আবছারের বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালীর বড় মহেশখালী ইউনিয়নে। কক্সবাজারের সন্তান হিসেবে এই পর্যটন শহরকে আইকনিক সিটিতে পরিণত করতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন কউক নতুন চেয়ারম্যান।

কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ভূ-রাজনীতি, জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়াদী বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজারের সম্ভাব্যতা কাজে লাগানোসহ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ ছাড়া পর্যটন, নীল অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে সবার সাহায্য সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।

২৭ আগস্ট ২০২২, ১০:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।