• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্চ মাতানো হুমায়ুনের ফরীদি হওয়ার গল্প

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্চ মাতানো হুমায়ুনের ফরীদি হওয়ার গল্প

বিনোদন ডেস্ক

হুমায়ুন ফরীদি। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত প্রতিভা। প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদি আজও বাংলা সিনেমার দুষ্প্রাপ্য এক সম্পদ। সব্যসাচী এই অভিনেতা শুধু অভিনয় শিল্পীই নয়, বরং তিনি এক উজ্জ্বল দর্শন। হুমায়ুন ফরীদির অসংখ্য উক্তি আজও অন্তর্জাল ও কাগজের পাতায় পাতায় ঘুরছে স্বগৌরবে।

মঞ্চ নাটক থেকে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় যাত্রা শুরু। এরপর তিনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। তবে হুমায়ুন ফরীদি খ্যাতির চূড়ায় পৌছান রুপালি পর্দার ঝলমলে বিকিরণে। সংশপ্তক নাটকে রমজান চরিত্র এখনো দেশের কোটি দর্শকের মনে গেঁথে আছে কেবল মাত্র হুমায়ুন ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কারণেই।

এ ছাড়া হুমায়ুন আহমেদের কালজয়ী নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ হুমায়ুন ফরীদিকে এক নতুন রুপ দেয়। নিজের অভিনয় নৈপুন্য প্রদর্শনে সবসময় সেরা ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফরীদি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই অভিনেতা ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

১৯৫২ সালের ২৯ মে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। ১৯৬৫ সালে বাবার চাকরির সুবাদে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন কিশোর হুমায়ুন ফরীদি।

কথিত আছে, মাদারীপুর থেকেই নাট্য জগতে প্রবেশ করেন ফরীদি। তৎকালীন প্রখ্যাত নাট্যকার বাশার মাহমুদের শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী নামের একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কল্যাণ মিত্রের 'ত্রিরত্ন' নাটকে ‘রত্ন’ চরিত্রে অভিনয় করেন ফরীদি। এক নাটকে অভিনয় করেই তিনি সাড়া ফেলে দেন। এরপর তিনি একাধারে ‘টাকা আনা পাই’, ‘দায়ী কে’, ‘সমাপ্তি’ ‘অবিচার’ নামের নাটকে অভিনয় করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় ফরীদির। শিক্ষা অসমাপ্ত রেখেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই লড়াকু জীবনযোদ্ধা।

যুদ্ধের পর ফিরে এসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন হুমায়ুন ফরীদি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

১৯৭৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘নাট্য উৎসব’ এর অন্যতম সংগঠক হুমায়ুন ফরীদি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সদস্যপদ লাভ করেন।

১৯৮৪ সালে তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ফরীদি। ১৯৮৫ সালে ‘দহন’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যদিয়ে রুপালি পর্র্দায় পদার্পণ ঘটে হুমায়ুন ফরীদির।

২০০৪ সালে হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া ও তৌকীর আহমেদের জয়যাত্রা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। একই বছর তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও ভূষিত হন।

১৯৮০’র দশকে হুমায়ূন ফরীদি প্রথম বিয়ে করেন শারারাত ইসলাম দেবযানী নামের এক নারীকে। ওই সংসারে হুমায়ুনের এক মেয়ে রয়েছে। পরে তিনি অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদও হয়।

অসংখ্য সিনেমা, নাটক ও মঞ্চ নাটকে অনবদ্য অভিনয় করা হুমায়ুন ফরীদি ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ধানমন্ডিতে তার নিজ বাড়িতে মারা যান। অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে বাথরুমে পড়ে যান ফরীদি। মাথায় আঘাত পেয়ে মারা যান শেষমেষ।

২৭ আগস্ট ২০২২, ০৬:১০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।