• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনয়ে চির তরুণ খলনায়ক থেকে কৌতুক সম্রাটের গল্প

অভিনয়ে চির তরুণ খলনায়ক থেকে কৌতুক সম্রাটের গল্প

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

ঢাকাই সিনেমার খল চরিত্রের অভিনেতাদের দাপুটে অভিনয় সম্পর্কে কারো অজানা নয়। হুমায়ুন ফরিদী, রাজিব, আহমদ শরীফ কিংবা গোলাম মোস্তফা, খল চরিত্রের এসব অভিনেতারা দর্শকনন্দিতও বটে। তবে খল চরিত্রে সবাইকে ছাপিয়ে যেন সেরাদের সেরা এটিএম শামসুজ্জামান। গুণী এই অভিনেতার প্রকৃত নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান।

১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সিনেমার দাপুটে এই অভিনেতা। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি আজীবন সম্মাননা, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। একাধারে অভিনেতা, চলচ্চিত্রকার ও লেখক এটিএম শামসুজ্জামান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার। এর মধ্যে ‘দায়ী কে’ সিনেমায় দূর্দান্ত অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতেন।

এ ছাড়া ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।

নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্ম নেয়া এটিএম শামসুজ্জামানের পৈত্রিক বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি। তাঁর বাবার নাম নূরুজ্জামান, তিনি নামকরা আইনজীবী ছিলেন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন এটিএম শামসুজ্জামানের বাবা।

ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এই কিংবদন্তী অভিনেতা। রুপালি পর্দায় এটিএম শামসুজ্জামানের প্রথম পদার্পণ ঘটে ১৯৬৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘নয়া জিন্দগানী’। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি।

পরে ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা’ চলচ্চিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানকে খবরের কাগজ বিক্রেতা চরিত্রে প্রথম রুপালি পর্দায় দেখা যায়। এরপর ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’, ‘মলুয়া’, ‘বড় বউ’ সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন দাপুটে এই অভিনেতা।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’, ‘লালন ফকির’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি মূলত আলোচনায় আসেন। ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন। খল চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে অল্প দিনেই এটিএম শামসুজ্জামান দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।

খল চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি এটিএম শামসুজ্জামান কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও দারুণ সফল। ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’ সিনেমায় তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

এ ছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘ম্যাডাম ফুলি’ ২০০১ সালে ‘চুড়িওয়ালা’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে তিনি শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার পান। ২০০৫ সালে জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে মকবুল চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমাটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।

এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রীর নাম রুনী জামান। তিনি ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে তার নিজ বড় ভাই এটিএম কামালুজ্জামান কবিরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যা সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

চলচ্চিত্রের মানুষ হয়েও এটিএম শামসুজ্জামান টিভি নাটকেও দুর্দান্ত অভিনয় করে গেছেন। তার অন্যতম নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- রঙের মানুষ, ভবের হাট, ঘর কুটুম, বউ চুরি, নোয়াশাল, শতবর্ষে দাদাজান, শীল বাড়ি ইত্যাদি।

২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মারা যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষ এটিএম শামসুজ্জামান। এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের খল ও কৌতুক চরিত্রের অভিনব মিশ্রণের সমাপ্তি ঘটেছে। ঢাকাই সিনেমা হারিয়েছে এক কিংবদন্তি এটিএম।

২৫ আগস্ট ২০২২, ০৫:৪৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।