• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনা পাড়ের মজার মানুষ ও ঢাকাই ছবির দিলদার

মেঘনা পাড়ের মজার মানুষ ও ঢাকাই ছবির দিলদার

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

ঢাকাই সিনেমার সর্বকালের সেরা কৌতুক অভিনেতার নাম নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢালিউডের তেমনই এক কীংবদন্তী কৌতুক অভিনেতার নাম দিলদার। ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই কৃতী অভিনেতা। ১৯৭৫ সালে দিলদার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন এই অভিনেতা।

বাংলা সিনেমায় হাস্যরসাত্মক চরিত্রগুলোর মধ্যে দিলদার বরাবর সবার সেরা। দিলদার তাঁর অঙ্গভঙ্গি ও বাচনভঙ্গি দিয়েই দর্শকদের মাত করে রাখতেন। প্রধান চরিত্রে অভিনয় না করেও যে দর্শকদের হৃদয়ে টিকে থাকা যায়, তারই জলন্ত উদাহরণ দিলদার। দিলদার অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ‘কেন এমন হয়’। ১৯৭২ সালে সিনেমাটির নির্মাণ শুরু হলেও মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে।

চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় কৌতুক অভিনয়ের সুবাদে দিলদারের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, অনেকে তাকে নায়কই মনে করতেন। এমনকি দিলদারকে নিয়েই নির্মিত হয়েছিল বিশেষ সিনেমা ‘আবদুল্লাহ’। সিনেমাপাড়ায় এমন খবরও রয়েছে যে, দিলদারের জন্য প্রতিটি সিনেমায় আলাদা স্ক্রিপ্ট লেখা হতো।

দিলদারের সমসাময়িক কৌতুক অভিনেতা ছিলেন টেলিসামাদ। তিনিও অনেক জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। তবে দিলদার তো দিলদারই। খ্যাতিমান এই কৌতুক অভিনেতা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলী জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’ 'গাড়িয়াল ভাই', 'অচিন দেশের রাজকুমার', 'প্রেম যমুনা', 'বাঁশিওয়ালা'-সহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করা দিলদার এক সময় পুরো বাংলাদেশ মাতিয়ে গেছেন। দিলদার বেঁচে থাকাকালীন নায়ক-নায়িকা-ভিলেন যে'ই হোক না কেন, সব পরিচালকের কমন একটি চাহিদার নাম ছিল দিলদার। বাংলা সিনেমায় কমেডিয়ান চরিত্র মানেই যেন দিলদার।

কথিত আছে, ছোট বেলা থেকেই হাসি-তামাশায় সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন কিংবদন্তী এই কৌতুক অভিনেতা। প্রথম দিকে বন্ধুদের আড্ডায় কৌতুক করলেও দিলদার হয়তো জানতেন না, তিনি হবেন বাংলাদেশের সেরা কৌতুক অভিনেতা। এটা বোধহয় তিনি নিজেও ভাবেননি কখনও। জীবনের একটা সময় দিলদার অভিনয়ে প্রতি ঝুঁকে পড়েন। চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসে তিনি থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিকে মঞ্চে অভিনয় করতেন দিলদার।

দেশে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে 'কেন এমন হয়' সিনেমা দিয়ে যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল দিলদারের, সেই হাসি ঠাট্টার রেশ এখনো বইছে গোটা দেশে। প্রায় পাঁচশো সিনেমায় অভিনয় করেছেন দিলদার। দর্শকদের হাসিয়েছেন লাগাতার।

আশি আর নব্বইয়ের দশকে বাংলা সিনেমা মানেই ছিল দিলদারের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। দিলদার তার মজার কাণ্ডকীর্তি নিয়ে হাজির হলেই সিনেমা অর্ধেক হিট! বাস্তবেও তা'ই ঘটেছে।

ব্যক্তিগত জীবনে খুব সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন দিলদার। যা আয় করতেন, তার অধিকাংশই ব্যয় করতেন মানুষের পেছনে। বন্ধুদের খাওয়াতে পছন্দ করতেন দিলখোলা দিলদার।

বর্নাঢ্য রুপালি জগতের অসংখ্য কীর্তিগাঁথা গল্পের অবসান ঘটিয়ে ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কমেডিয়ান দিলদার। সারাজীবন মানুষ হাসানো দিলদার এই একটি দিন-ই কেবল কোটি দর্শক-ভক্তকে কাঁদিয়ে ফিরেছিলেন দূর দূরান্তের অসীম গন্তব্যে।

২৩ আগস্ট ২০২২, ০৬:১৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।