• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খলনায়ক থেকে অ্যাকশন হিরো: জসিমের পালাবদলের গল্প

খলনায়ক থেকে অ্যাকশন হিরো: জসিমের পালাবদলের গল্প

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। রুপালি পর্দার জনপ্রিয় সুপার হিরো প্রয়াত জসিম-ই আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন। ১৯৫০ সালে জন্ম নেয়া এই গুণী অভিনেতা ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ফাইট পরিচালক ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন ধাচের পুরোধা হিসেবে নায়ক জসিম খ্যাতি লাভ করেছেন শুরু থেকেই। প্রখ্যাত অভিনেতা আজিমের হাত ধরে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করলেও নায়ক জসিম নিজ অভিনয় গুণে দর্শকের হৃদয়ে মিশে গিয়েছিলেন অল্প দিনেই। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ সিনেমায় অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান এই গুণী অভিনেতা।

১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জসিম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এই দুঃসাহসিক ব্যক্তি।

আশির দশকের জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে জসিম অন্যতম। ১৯৭৩ সালে রংবাজ সিনেমায় অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। তবে ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের অভিনয় করেন জসিম। খল চরিত্রে সফলতা পেলেও পরে তিনি বাংলা সিনেমার সুপার হিরো হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আশির দশকের সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত এই অ্যাকশন হিরো।

ব্যক্তিগত জীবন

জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্লখ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্রের নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন। জসিমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল ও সামি।
১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান কিংবদন্তী এই অভিনেতা। জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তার নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়।

এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশী অ্যাকশন সিনেমাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে জসিমের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি রংবাজ, রাজ দুলারী, দোস্ত দুশমন, তুফান, জবাব, নাগ নাগিনী, বদলা, বারুদ, সুন্দরী, কসাই, লালু মাস্তান, নবাবজাদা, অভিযান, কালিয়া, বাংলার নায়ক, গরিবের ওস্তাদ, ভাইবোন, মেয়েরাও মানুষ-সহ অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় তিনি শেষ খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরই ভিলেন জসিম নায়ক জসিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। জসিম, আরমান ও মাহবুব মিলে তৈরী করেছিলেন জেমস ফাইটিং গ্রুপ, যারা চলচ্চিত্রের মারপিট পরিচালনা করতেন এবং স্টান্ট সরবরাহ করতেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাস দত্তের ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছাড়া দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবির মাধ্যমে জসিম আলোড়ন তোলেন। ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম ‘শোলে’ ছবির বাংলা পুনর্নিমাণ ছিল। ছবিটিতে তিনি গব্বারের চরিত্র করেছিলেন। দোস্ত দুশমন সিনেমায় অভিনয়ের কারণে খোদ শোলে ফিল্মের নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান নায়ক জসিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সাথে একই সাথে প্রেমিক এবং ভাইরূপে চরিত্রদান করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। নায়ক জসিমের হাত ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে রিয়াজের। এফডিসিতে ঘুরতে এসে জসিমের নজরে পড়েন রিয়াজ।

২১ আগস্ট ২০২২, ০৪:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।