• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাই সিনেমার পারফেক্ট হিরো আলমগীরের বর্নাঢ্য কীর্তি

ঢাকাই সিনেমার পারফেক্ট হিরো আলমগীরের বর্নাঢ্য কীর্তি

ফাইল ছবি

বিনোদন ডেস্ক

বাংলা চলচ্চিত্রের ৮০ ও ৯০ দশকের দাপুটে এক অভিনেতার নাম আলমগীর। পারিবারিক টানাপোড়েন, সামাজিক গল্প, অ্যাকশন কিংবা রোমান্টিক সিনেমা, সব চরিত্রেই তিনি যেন পারফেক্ট। ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন নায়ক আলমগীর। তাঁর আদি নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় এই নায়কের প্রকৃত নাম মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর।

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম সবাক সিনেমার নাম মনে আছে তো? হ্যা প্রিয় দর্শক, মুখ ও মুখোশের কথাই বলছি। আপনারা কি জানেন, প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখশের অন্যতম প্রযোজক কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া নায়ক আলমগীরের বাবা।

তবে মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীরের ‘নায়ক আলমগীর’ হয়ে ওঠার নেপথ্য কারিগর খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কুমকুম। দেশের অন্যতম সেরা এই চলচ্চিত্র পরিচালকের বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়েই দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করেন নায়ক আলমগীর।

১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমায় পাশর্^ চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে রূপালি পর্দায় অভিষেক হয় আলমগীরের। পরে ১৯৭৮ সালে নায়ক রাজ রাজ্জাক ও সোহেল রানার সঙ্গে ‘জিঞ্জির’ চলচ্চিত্রে সহঅভিনেতা হিসেবে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে তিনি সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এছাড়া তিনি ‘ভাত দে’, ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’, ‘অপেক্ষা’, ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘মরণের পরে’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘অন্ধ বিশ^াস’, ‘মাটির মায়া’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘ মা ও ছেলে’, ‘জীবন মরণের সাথী’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘দস্যুরাণী’, ‘লাভ ইন সিমলা’, ‘মনিহার’, ‘মনের মানুষ’, ‘আগুনের আলো’, ‘সাম্পানওয়ালা’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘বৌমা’, ‘ভাত দে’, ‘গরীবের বউ’, ‘পিতা-মাতা’, ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ ও ‘মায়ের দোয়া’সহ অসংখ্য কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করেছেন নায়ক আলমগীর।

এসব সিনেমার মধ্যে ‘অপেক্ষা’, ‘ক্ষতিপূরণ’, ‘মরণের পরে’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘অন্ধ বিশ^াস’ ও ‘দেশপ্রেমিক’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবেও সফল এই গুণী অভিনেতা। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও সহ-অভিনেতার পুরষ্কারসহ নায়ক আলমগীর এ পর্যন্ত ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ‘নিষ্পাপ’ চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালনায় নামেন নায়ক আলমগীর। ১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ সিনেমায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মনোনীত হন। অর্জন করেন প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও দারুণ ভাবে দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আলমগীর। কয়েকটি সিনেমার গানেও তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘আগুনের আলো’ চলচ্চিত্রের একটি গানে প্রথম কণ্ঠ দেন এই গুণী অভিনেতা। এছাড়া ‘কার পাপে’, ‘ঝুমকা’ ও ‘নির্দোষ’ চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন নায়ক আলমগীর।

পারিবারিক জীবনে নায়ক আলমগীর ১৯৭৩ সালে গীতিকার খোশনুর আলমগীরকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে একমাত্র কন্যা আঁখি আলমগীরের জন্ম হয়। পরে ১৯৯৯ সালে আলমগীর ও খোশনুরে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে দেশের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লাকে বিয়ে করেন চিত্রনায়ক আলমগীর।

আলমগীরের বর্নাঢ্য কর্মজীবন

নায়ক আলমগীর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘নিষ্পাপ’। ১৯৮৭ সালে তিনি শাবানার বিপরীতে অভিনয় করেন মায়ের দোয়া সিনেমায়। একই বছর বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘অপেক্ষা’ ও সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী-স্ত্রী’ সিনেমায় অভিনয় করেন নায়ক আলমগীর।

‘অপেক্ষা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর অভিনয় করেন হাফিজ উদ্দীন পরিচালিত ‘পথে হল দেখা’ সিনেমায়। এরপর ১৯৮৯ সালে ‘ক্ষতিপূরণ’ ১৯৯০ সালে ‘মরণের পরে’, ১৯৯১ সালে ‘পিতা মাতা সন্তান’ ও ১৯৯২ সালে ‘অন্ধ বিশ্বাস’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে টানা চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন তিনি।

এছাড়া ৯০এর দশকে নায়ক আলমগীর অভিনীত ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘সান্ত্বনা’, ও ‘ক্ষমা সিনেমা ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।

সিনেমার পাশাপাশি নাট্যধর্মী বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অনবদ্য অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনয় শিল্পী। ১৯৯৪ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দেশপ্রেমিক’, শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ঘাতক’ ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পরিচালিত ‘স্নেহ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন।

১৯৯৫ সালে তিনি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘কন্যাদান’ চলচ্চিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন নায়ক আলমগীর। ওই সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা লিমা। পরের বছর তিনি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাস অবলম্বনে আখতারুজ্জামান পরিচালিত ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তী অভিনেতা।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তী নায়ক অভিনয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৩ আগস্ট ২০২২, ০৪:১৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।