• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বেবি ওয়াকার: শিশুর জন্য বিপজ্জনক যে কারণে

বেবি ওয়াকার: শিশুর জন্য বিপজ্জনক যে কারণে

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আপনি কি জানেন, কানাডায় বেবি ওয়াকার বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ? এমনকি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (এএপি) যুক্তরাষ্ট্রেও বেবি ওয়াকার বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভাবছে। সাধারণত, বাবা-মায়েরা মনে করেন যে, তাদের সন্তান বেবি ওয়াকারে হেঁটে বেড়ায়, বাচ্চারা ঘরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। এই দৃশ্য হয়তো আপনাকে আনন্দ দিতে পারে। কিন্তু আপনি জানেন না, আপনি আপনার সন্তানের কত বড় ক্ষতি করছেন।

হার্ভার্ড হেলথ পাবলিসিং এর ওয়েব জার্নালে বেবি ওয়াকারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। নিবন্ধটি লিখেছেন প্রখ্যাত গবেষক প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ফ্যাকাল্টি এডিটর কøাইর ম্যাকার্থি।

বেবি ওয়াকার কেন বিপজ্জনক

গবেষকরা বলছেন, বেবি ওয়াকার উন্নত দেশেই নয়, বরং সব দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু অনেক বাবা-মা জানেন না, এই বেবি ওয়াকার বাচ্চার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

বাচ্চার মেরুদন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়: পেডিয়াট্রিক্স জার্নালের সমীক্ষা অনুসারে, ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে, ১৫ মাসের কম বয়সী ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু বেবি ওয়াকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বেবি ওয়াকারে বাচ্চারা সামনে, পেছনে অথবা ডান বামে ঝুঁকে হাঁটাহাঁটি করে। এতে বাচ্চার মেরুদন্ড দীর্ঘমেয়াদে বাঁকা হয়ে যেতে পারে।

মারাত্মক আঘাত: মার্কিন গবেষণা বলছে, শিশুদের বেশিরভাগ আঘাতের ঘটনা ঘটে যখন শিশুরা হাঁটার পথে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। এসময় সাধারণত শিশুরা মাথায় এবং ঘাড়ে বেশি আঘাত পায়। আর এই আঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেবি ওয়াকারে থাকা বাচ্চারা।

ভারসাম্য দূর্বল হয়: যেসব বাচ্চা বেবি ওয়াকার ব্যবহার করে, তাদের শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে। এটিও গবেষণায় প্রমাণিত। ওয়াকারে থাকা শিশুরা তাদের শরীরের শক্তি ও ভরের ওপর বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পারে না।

দুর্ঘটনার প্রবণতা: শিশু বেবি ওয়াকারে থাকা অবস্থায় জিনিসপত্র ওপরে টেনে নেয়া বা খেলার চেষ্টা করে। এসময় একটু অসতর্ক হলেই শিশুরা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে হতে পারে দুর্ঘটনা।

শিশু পা বাঁকা হয়ে যেতে পারে: বেবি ওয়াকারে থাকা বাচ্চাদের হাঁটার ভঙ্গি ও গতি সাভাবিক হয় না। এই বাচ্চাদের পা এলোমেলো ভাবে মাটিতে পড়ে। এ ছাড়া পায়ের গঠন সাভাবিক থাকে না। তাই, বাচ্চার পা সাভাবিক রাখতে এবং হাঁটার ভঙ্গি ঠিক রাখতে বেবি ওয়াকার পরিহার করুন।

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০১৪ সালে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই ২ হাজার শিশুকে জরুরী কক্ষে হাঁটার কারণে আঘাতের জন্য দেখা গেছে। যাদের সবাই বেবি ওয়াকার ব্যবহার করেছিল।

অভিভাবকরা যা করবেন

→ যারা ভাবেন আপনার সন্তান বেবি ওয়াকারে হাঁটলে কিছুটা ঝামেলা কমবে, আপনারা ভুল করছেন। আবার অনেক অভিভাবক বেবি ওয়াকার কেনেন শুধুমাত্র বাচ্চাদের দ্রুত হাঁটতে শেখানোর জন্য। অভিভাবকদের এমন চিন্তা একেবারেই অমূলক।

→ আপনার সন্তান ঠিক সময় অনুযায়ী প্রাকৃতিক নিয়মেই হাঁটা শিখবে। আপনি তাকে হাঁটানোর জন্য তোড়জোড় করবেন না। আপনি যেই বয়সে আপনার শিশুকে হাঁটতে শেখাচ্ছেন, হয়তো সেই বয়সে আপনার শিশুর পায়ের হাড় হাঁটার উপযোগী নয়।

→ বরং আপনার শিশু সন্তানকে আনন্দের সাথে খেলতে দেন। ৬ মাস থেকে শুরু করে শিশুরা সোজা থাকতে পছন্দ করে, তারা ছুটাছুটি করতে পছন্দ করে। মনে রাখবেন, বেবি ওয়াকার যত্নশীল বাবা-মায়ের জন্য একটি মিথ্যা ধারণা মাত্র।

 

তথ্যসূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিসিং।

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।