• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ ‘গ্র্যান্ড কোলি’ কেন কিভাবে

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ ‘গ্র্যান্ড কোলি’ কেন কিভাবে

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

গ্র্যান্ড কোলি বাঁধটি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের কলম্বিয়া নদীর উপরে অবস্থিত। এটি একটি কংক্রিট মাধ্যাকর্ষণ বাঁধ। যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৯৪২ সালে।

যেভাবে নির্মাণ হলো ‘কোলি বাঁধ’

১৯৩৩ সালের গল্প। প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক একযোগে কাজ শুরু করেন। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সেচ ও জলবিদ্যুতের সরবরাহ করতেই এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এটি গ্র্যান্ড কুলি মালভূমিতে নির্মাণ করা হয়। যে কারণে এর নাম দেয়া হয় কোলি ড্যাম বা কোলি বাঁধ।

এই বাঁধটি নির্মাণে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা। বাঁধটির ভিত্তি খননের জন্য ২২ মিলিয়ন ঘন গজ (১৭ মিলিয়ন মিটার) ময়লা ও পাথর অপসারণ করতে হয়েছে।

গ্র্যান্ড কোলি বাঁধে বিদ্যুৎ উৎপাদন

গ্র্যান্ড কোল বাঁধ ৩৩ টি জলবিদ্যুৎ জেনারেটর সমন্বিত চারটি ভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র ধারণ করে। মূল কেন্দ্রে ১৮ টি প্রধান জেনারেটর রয়েছে। গ্র্যান্ড কুলি বাঁধ বার্ষিক ২১ টি-ডব্লিউ-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এর অর্থ হল বাঁধটি গড়ে প্রায় ২ হাজার ৯৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

পরিবেশগত প্রভাব

এই বাঁধটির প্রভাব স্থানীয় আদিবাসী আমেরিকান উপজাতির জন্য মারাত্মক ছিল। গ্র্যান্ড কোল বাঁধের প্রভাবে কলম্বিয়া নদীতে মাছ কমতে শুরু করে। এতে মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল আমেরিকানরা বেকার হয়ে পড়েন।

গ্র্যান্ড কোলি বাঁধটি মূল তলভূমির ২১ হাজার একর জমি বন্যায় প্লাবিত করে। যেখানে আদিবাসী আমেরিকানরা হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করত। তাঁরা এই প্লাবনের জন্য বসতি ও কবরস্থান স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হয়।

পর্যটন ও কোলি বাঁধ

১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে নির্মিত, ভিজিটর সেন্টারে অনেক ঐতিহাসিক ছবি, ভূতাত্ত্বিক নমুনা, টারবাইন এবং বাঁধের মডেল এবং একটি থিয়েটার রয়েছে। দর্শনার্থীরা এখন কোলি বাঁধের জেনারেটরগুলি দেখার জন্য ভিড় করে। বছর জুড়ে ভ্রমণ করতে অনেকেই এই বাঁধে আসেন।

গ্র্যান্ড কোলি বাঁধের জানা অজানা

→ বর্তমানে গ্র্যান্ড কোলি ৬ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

→ ১৯২০ সালের দিকে এই বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আমেরিকানদের একটি অংশ এটিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি করার পক্ষে ছিলেন। আরেক পক্ষ এই বাঁধটি কেবলই সেচ কাজের জন্য নির্মাণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

→ তবে ১৯৩৩ সালে ২৯০ ফুট বা ৮৮ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই ব্যবহৃত।

→ এই বাঁধ থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ শক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উত্তর-পশ্চিম আমেরিকার শিল্পগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

→ ধারাবাহিকভাবে আধুনিকীকরণ এবং পাম্প-জেনারেটর স্থাপনের মাধ্যমে, বাঁধটি এখন চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরবরাহ করে। যার মোট ইনস্টলড ধারণ ক্ষমতা ৬ হাজার ৮০৯ মেগাওয়াট।

→ কলম্বিয়া নদীর অববাহিকা প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে, বাঁধের জলাধারটি ৬ লাখ ৭১ হাজার একর জমিতে সেচের জন্য পানি সরবরাহ করে।

→ এই জলাধারটিকে ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট হ্রদও বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের নামে নামাঙ্কিত এই বাঁধের নামকরণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত হয়নি।

০১ জুন ২০২৪, ০৩:২৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।