• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বনের প্রাণীদের পানি খাইয়ে যে সুখ প্যাট্রিকের

বনের প্রাণীদের পানি খাইয়ে যে সুখ প্যাট্রিকের

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দেশ কেনিয়া। পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে রয়েছে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। প্রাকৃতিক জলাধারের জন্য এক সময় কেনিয়ার নামডাক থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেসব আজ ইতিহাস। কেনিয়ার বৃহত্তম হৃদ বা লেকগুলো আজ আর জীবন্ত নেই। এতে করে একদিকে দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, অন্যদিক বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র পড়েছে হুমকির মুখে।

কেনিয়া সরকার বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত দেশ কেনিয়া এখন যুদ্ধ করছে দরিদ্রতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে। দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও খেই হারিয়েছে বহু আগে।

তবে এত সব নেতিবাচক খবরের মাঝেও কেনিয়া এখনো মানবিক একটি দেশ হতে চলেছে। দেশটির এমন এক বাসিন্দা রয়েছেন, যার কারণেই মূলত আমাদের আজকের এই উপস্থাপনা। যে মানুষটি নিয়ে আজ কথা হবে, তার নাম প্যাট্রিক। কেনিয়ার জঙ্গল ও মরু অঞ্চলে তৃষ্ণার্ত ও অভুক্ত প্রাণীদের নিয়মিত পানি পান করান প্যাট্রিক। প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তিনি।

কে এই প্যাট্রিক

২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালে কেনিয়ার তাইতা পাহাড়ের অভয়ারণ্যে বেড়াচ্ছিলেন প্যাট্রিক কিলোঞ্জো মলুয়া। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ তার চোখে কয়েকটা বুনো মোষ ধরা পড়ে। ওই বুনো মোষগুলো একটা মরা খালের মধ্যে নাক গুঁজে পড়েছিল। প্যাট্রিক তখন এগিয়ে যান, এবং তিনি দেখেন, মোষগুলো পানির জন্য ওভাবে বসে ছিল।

এরপরই সংরক্ষিত ওই বনের ওয়ার্ডেনের সঙ্গে কথা বলেন প্যাট্রিক। সরকারি ভাবে প্রাণীদের পানি সরবরাহের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ব্যর্থ হন তিনি। পরে নিজ উদ্যোগে প্রতিদিন ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রাণীদের জন্য পানির ট্যাংকার নিয়ে ছুটেন মিস্টার প্যাট্রিক।

এখন কেমন আছে প্রাণীগুলো

বর্তমানে বন্যপ্রাণীগুলো প্যাট্রিকের গাড়ির শব্দ শুনলেই বুঝতে পারে যে, প্যাট্রিক এসেছে। প্রাণীরা বুঝতে পারে যে, প্যাট্রিকের গাড়ির শব্দ মানে, তাদের পানি পান করার সময় হয়েছে। এবং জঙ্গলে প্যাট্রিকের গাড়ি পৌছানো মাত্রই প্রাণীরা গাড়ীর চারপাশে ঘিরে ধরে। টানা পাঁচ বছর ধরে প্যাট্রিক এই মহৎ কাজটি করে চলেছেন।

প্যাট্রিকের কাজ কোথায় চলে

কেনিয়ার স্যাভো ন্যাশানাল পার্ক এবং লুমো কমিউনিটি অভয়ারণ্যে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করে চলেছেন এই জলমানব। আর এ নিয়ে প্যাট্রিকের কোনো গর্ব নেই, নেই কোনো গল্প। তারপরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্যাট্রিকের বক্তব্য পাওয়া গেছে। সেখানে প্যাট্রিক বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে প্রত্যেকেরই বেঁচে থাকার সমান অধিকার আছে। আর একজনকে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করার চেয়ে বড়ো তৃপ্তি আর কিছুতেই নেই। প্যাট্রিকের কাছে হাতি, গণ্ডার, মোষদের সঙ্গে মানুষের কোনো প্রভেদ নেই।’

প্যাট্রিকের অজানা কথা

— কেনিয়ার একটি গ্রামে ৪৮ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন প্যাট্রিক।
— যুবক বয়স থেকেই প্যাট্রিক জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণী রক্ষার কাজে নিজ উদ্যোগে নিয়োজিত।
— ১৬ বছর ধরে তিনি জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে শিকারীদের পেতে রাখা ফাঁদ সরানোর কাজ করে চলেছেন।
— বন্যপ্রাণী রক্ষায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণাও করেন প্যাট্রিক।
— বনের প্রাণীদের তৃষ্ণা মেটাতে নিজস্ব সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছেন এই মহৎ মানুষ।

২৭ মার্চ ২০২৪, ০১:২৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।