• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালি

ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালি

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)। ‘আল মুনকিযু মিনাদ্দালাল’ নামক গ্রন্থে ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) নিজের সম্পর্কে লিখেছেন- ‘শৈশব থেকেই আমার স্বভাব ছিল সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা। যে কোন তথ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা। ইমাম গাজ্জালী সব ধরণের মতাদর্শ ও দলের সঙ্গে মিশতেন। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদের আকীদা ও ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার নেশা ছিল ইমাম গাজ্জালীর ভেতরে।

জন্ম ও শৈশব

আল-গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে ১০৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আল-গাজ্জালী। গাজ্জাল শব্দের অর্থ ‘সুতা কাটা’। কারও মতে ইমাম গাজ্জালীর বংশের লোকেরা সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন। আর সেই কারণেই তাদের বংশ উপাধি গাজ্জালী নামে পরিচিত। ১১১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

কথিত আছে, মৃত্যুর দিন ভোরে ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) ফজরের নামাজ শেষে তার ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে নিজ হাতে কাফনের কাপড় পরিধান করেন। এরপর তিনি কেবলার দিকে মুখ করে শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান।

ছোট বেলায় তিনি বাবাকে হারিয়ে তুস নগরীতে বেড়ে ওঠেন। ইমাম আল গাজ্জালি (রহঃ) তৎকালীন শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন।

কর্মজীবন

পরিণত বয়সে তিনি ইরাকের বাগদাদ গমন করেন। বাগদাদে তৎকালীন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনায় যোগ দেন। মুসলিম দর্শন, ফিকহ, ইলমুল কালাম (ধর্মতত্ত্ব) বিষয়ে তিনি সর্বকালের প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি বাগদাদে তৎকালীন দুনিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদের নেজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর নিযুক্ত হন। নেজামুল মুলক তুসী মালিক শাহ সালজুকী ও বাগদাদের খলিফার দরবারে যোগ্য আসন লাভ করেন।

গাজ্জালীর সংস্কারমূলক কাজ

তিনি ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস ও মুলনীতিসমূহের এমন যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা পেশ করেন যে, তার বিরুদ্ধে কমপক্ষে সে যুগে এবং তার পরবর্তী কয়েক যুগ পর্যন্ত ন্যায়শাস্ত্র ভিত্তিক কোনো কোনো প্রকার আপত্তি উত্থাপিত হতে পারতো না। এই সংগে তিনি শরিয়তের নির্দেশাবলী এবং ইবাদতের গূঢ় রহস্য ও যৌক্তিকতাও বর্ণনা করেন এবং এমন একটি চিত্র পেশ করেন যার ফলে ইসলাম যুক্তি ও বুদ্ধির পরীক্ষার বোঝা বহন করতে পারবে না বলে যে ভুল ধারণা মানুষের মনে স্থানলাভ করেছিল, তা দূর হয়।

তিনি দ্বীনের জ্ঞানকে সঞ্জীবিত ও সতেজ করেন। চেতনাবিহীন ধার্মিকতাকে অর্থহীন গণ্য করেন। অন্ধ অণুসৃতির কঠোর বিরোধাতা করেন।

ইমাম গাজ্জালী পুরাতন জরাজীর্ন শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেন এবং একটি নয়া শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা পেশ করেন। সে সময় পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে যে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল, তার মধ্যে দুই ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছিল। প্রথমটি হলো এই যে, দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষাব্যস্থা পৃথক ছিল।

গাজ্জালীর লেখা বিখ্যাত বই

ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) ৪০০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তার অধিকাংশ বইগুলোতে ধর্মতত্ব, দর্শন ও সুফিবাদ আলোচনা করা হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- এহইয়া উলুমুদ্দীন, তাহাফাতুল ফালাসিফা, কিমিয়ায়ে সা’আদাত, হাকিকাতুর রুহু, দাকায়েকুল আখবার, আসমাউল হুসনা, ফাতাওয়া, মিশকাতুল আনোয়ার, আসরার আল মোয়ামেলাতুদ্দিন, মিআর আল ইলম, মুনক্বীয, মুকাশাফা'তুল কুলুব, আল ইক্বতিসাদ ফিল ই'তিক্বাদ, মিনহাজুল আবেদীন, বিদায়াতুল হেদায়াহ ইত্যাদি।

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৪:৫৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।