• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিংবদন্তী রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

কিংবদন্তী রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

ফাইল ছবি

ফিচার ডেস্ক

গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এক রাজনীতিকের নাম হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। কীর্তিমান এই পুরুষ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানি বাঙালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূলনেতাদের মধ্যে অন্যতম সোহ্রাওয়ার্দী। তাকে বলা হয় ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’। বিবিসি বাংলা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায়ও তিনি স্থান পেয়েছেন স্বগৌরবে।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন:

পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ১৮৮২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাঁর বাবা বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা হাইকোর্টের খ্যাতনামা বিচারক ছিলেন। মা ছিলেন নামকরা উর্দু সাহিত্যিক খুজাস্তা আখতার বানু।

১৯২০ সালে তিনি বেগম নেয়াজ ফাতেমাকে বিয়ে করেন। বেগম নেয়াজ ফাতেমা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আবদুর রহিমের কন্যা। ১৯২২ সালে তিনি মারা যান। সোহরাওয়ার্দীর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন পোলিশ বংশোদ্ভূত রাশিয়ান অভিনেত্রী বেগম বীরা সোহরাওয়ার্দী।

শিক্ষাজীবন

সোহরাওয়ার্দী নিজ উদ্যোগে বাংলা ভাষা শিখেন এবং বাংলার চর্চা করেন। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরবি ভাষা এবং সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯১৩ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতক অর্জন করেন। এছাড়া অক্সফোর্ড থেকে তিনি ‘ব্যাচেলর অব সিভিল ল’ (বি. সি. এল.) ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯১৮ সালে গ্রে’স ইন হতে বার এট ল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে এসে আইন পেশায় নিয়োজিত হন।

রাজনৈতিক জীবন

চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে সোহরাওয়ার্দীর রাজনীতির হাতেখড়ি। এটি তখন মূলত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ ছিল। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস। ১৯২৭ সালে সোহরাওয়ার্দী পদত্যাগ করেন।
১৯২৮ সালে সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সোহরাওয়ার্দী। ১৯৩৬ সালের শুরুর দিকে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি নামক দল গঠন করেন। ১৯৩৬ সালের শেষের দিকে এই দলটি বাংলা প্রাদেশিক প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়।

১৯৪৬ এর নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বিপুল বিজয়ে তিনি এবং আবুল হাশিম মূল কৃতিত্বের দাবিদার ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সমর্থন প্রদান করেন। যুক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৯৪৬ সালে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন এবং সহযোগিতা প্রদান করেন।

১৯৪৭ সালে তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান। তবে পদত্যাগের পর তিনি সাথে সাথে পাকিস্তান না গিয়ে কলকাতায় থেকে যান। এসময় কলকাতার মুসলমানদের সাথে হিন্দুদের পুনরায় বিরোধের সম্ভাবনায় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাহায্য চান। মহাত্মা গান্ধী এসময় তিনি যৌথ ভূমিকার শর্তে সোহ্রাওয়ার্দীর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা প্রশমনের ডাকে সাড়া দেন।

সোহরাওয়ার্দীকে পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য পদ থেকে অপসারিত করা হয়। তার অনুসারীরা অনেকে ১৯৪৮ এর শুরুর দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ এবং ১৯৪৯ এর জুনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৫৩ সালে তিনি একে ফজলুল হক এবং মাওলানা ভাসানীর সাথে একত্রে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাভূত করার জন্য আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে এই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।

মৃত্যু:

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর মারা যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:১০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।