• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

সৈয়দ নজরুল ইসলাম: তৃণমূল থেকে দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম: তৃণমূল থেকে দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি

ফাইল ছবি

ফিচার ডেস্ক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। ১৯৭১ এ মহান স্বাধীনতার ঘোষণার পর ‘মুজিবনগর সরকার’ গঠনের অগ্রনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি আজও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও নারীর সম্ভ্রমে কেনা বাংলাদেশের যে ইতিহাস, সেই ইতিহাসের পাতায় পাতায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক উজ্জ্বল জলছাপ। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি গণমানুষের জন্য রাজনীতিতে ব্যয় করেছেন। কীর্তিমান এই ব্যক্তি বিবিসি বাংলা শ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে অন্যতম সেরা একজন বাঙালি ব্যক্তিত্ব।

জন্ম পরিচয়

১৯২৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের যশোদল উপজেলার বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দা নাফিসা ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এই দম্পতির ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তাঁর বড় ছেলে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামের অন্য তিন ছেলে হলেন- সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ও সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। দুই মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ও সৈয়দা রাফিয়া নূর।

শিক্ষাজীবন

কিশোরগঞ্জের যশোদল মিডল ইংলিশ স্কুলে সৈয়দ নজরুল ইসলামের লেখাপড়ার হাতেখড়ি। এরপর তিনি কিশোরগঞ্জ আজিমুদ্দিন হাই স্কুল ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি ম্যাট্রিক ও ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বি.এ. (অনার্স) ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৫৩ সালে এল.এল.বি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

কর্মজীবন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হলেও সরকারি চাকরিতে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। তিনি ১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরে ১৯৫৫ সালে ময়মনসিংহে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

রাজনীতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম

১৯৫৭ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাক সরকার। ওই সময় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ নজরুল ইসলাম

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান করে একটি সরকার কাঠামো গঠন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। ওই সরকারের কাঠামোতে উপরাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাজউদ্দিন আহমদের গঠিত সেই সরকার ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে পরিচিত। যেই সরকারে তাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

পরে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়,

আমি বাংলাদেশের উপ রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে এ আদেশ জারি করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্র গঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষণে, সকল সরকারি, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগবিধির আওতায় যে শর্তে কাজে বহাল ছিলেন, সেই একই শর্তে তারা চাকুরিতে বহাল থাকবেন। বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধি যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তারা সকল সরকারি কর্মচারীকে স্ব স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।

মৃত্যু

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রথমে গৃহবন্দী করে খন্দকার মুশতাকের সরকার। এরপর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ৩ নভেম্বর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যেই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জেল হত্যা দিবস’ নামে কুখ্যাতি পেয়েছে।

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।