• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্যার সলিমুল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাঙালি মুসলমানের স্মৃতিপটে

স্যার সলিমুল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাঙালি মুসলমানের স্মৃতিপটে

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস যেন একে অপরের মাঝে মিশে আছে। খাজা সলিমুল্লাহ বা নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অন্যতম অগ্রনায়ক। ১৮৭১ সালের ৭ জুন ঢাকার আহসান মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন এই গুনী শিক্ষানুরাগী। তিনি ছিলেন ঢাকার চতুর্থ নবাব। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার চৌরঙ্গিতে মৃত্যুবরণ করেন।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে স্থান করে নেয়াদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বাবা ছিলেন নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ও তাঁর দাদা ছিলেন নবাব খাজা আব্দুল গনি। নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সলিমুল্লাহ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সলিমুল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিপক্ষে কলকাতা ও ঢাকায় আন্দোলনে হয়েছিল। কলকাতায় তখন বরেণ্য কবি সাহিত্যিকরাও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতায় নেমেছিলেন। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে ঢাকায় বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। বর্তমানে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে মূল ক্যাম্পাস যেই জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তার অধিকাংশই নবাব সলিমুল্লাহ দান করেন।

বঙ্গভঙ্গ ও সলিমুল্লাহ

১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকা সফর করেন। ওই সময় নবাব সলিমুল্লাহ পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো লর্ড কার্জনের কাছে তুলে ধরেন। আসামে উৎপাদিত চা ও অন্যান্য পণ্য বিদেশে রপ্তানীর ব্যাপারে পরিবহন ব্যয় কমানোর উদ্যোগ হিসেবে সলিমুল্লাহ কলকাতা বন্দরের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের পরামর্শ তুলে ধরেন। সলিমুল্লাহর পরামর্শ লর্ড কার্জন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। পরে বৃটিশ সরকার বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ভাবনা নিয়ে কাজ শুরু করে।

ওই সময় বৃটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নবাবের আবেদন যুক্ত হয়ে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলা বিভাজনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর প্রেক্ষিতে কলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধজীবী ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৯০৫ সালে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম নিয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ গঠন করা হয়। বঙ্গ ভঙ্গ নিয়ে বাঙ্গালী হিন্দুদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে ১৯১১ সালে বঙ্গ ভঙ্গ রদ হয়ে যায়।

মুসলিম লীগ গঠন

১৮৭৭ সালে সৈয়দ আমীর আলীর উদ্যোগে ‘সেন্ট্রাল মোহামেডান এ্যাসোসিয়েশন’ গঠনের সাথে স্যার সৈয়দ আহমদ খান দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মুসলমানদেরকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পর হিন্দি এবং উর্দু'র বিরোধ সৃষ্টি হলে মুসলমানদের স্বার্থের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ সচেতন হয়ে উঠেন। ১৮৮৯ সালে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে তিনি ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডিফেন্স এ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন।

১৮৯৩ সালে উত্তর ভারতে ‘মোহমেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অরগানাইজেশন অব আপার ইন্ডিয়া’ গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে সাহরানপুরে মুসলিম রাজনৈতিক সংস্থা গঠিত হয়। ১৯০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঞ্জাবে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

পরে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ভারত জুড়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ এবং মুসলিম বিদ্বেষের ঝড় বয়ে যায়। ওই সময় স্যার সলিমুল্লাহ সর্বভারতীয় মুসলিম ঐক্যের আহ্বান জানান। ১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্র ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি ‘সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ’র প্রস্তাব রাখেন। ১৯০৬ সালের ২৮-৩০শে ডিসেম্বর সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলন আহুত হয়। শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সমগ্র ভারতের প্রায় ৮ হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। নবাব সলিমুল্লাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী’ অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন; হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন। কিছু প্রতিনিধির আপত্তির প্রেক্ষিতে কনফেডারেন্সী শব্দটি পরিত্যাগ করে লীগ শব্দটিকে গ্রহণ করা হয়। অবশেষে সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ বা নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।