বঙ্গভ্যাক্সের অ্যানিমেল ট্রায়াল সম্পন্ন, অনুমোদনের অপেক্ষা
ফাইল ছবি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে তৈরি বঙ্গভ্যাক্স টিকার এনিমেল (বানরের শরীরে) ট্রায়াল আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। প্রাথমিক ফলাফলে এই টিকা করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ১১টি ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করেছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। গতকাল সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট থেকে বানরের ওপর শুরু হওয়া ট্রায়াল আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে। এরপর আগামী সপ্তাহের দিকে ট্রায়ালের বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) কাছে হস্তান্তর করতে পারব বলে আশা করছি।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ডেল্টাসহ ১১টি ভেরিয়েন্ট বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় ছিল। আমরা এ ১১টি ভেরিয়েন্টের সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিস করে টিকার সিকোয়েন্স মিলিয়ে দেখেছি প্রতিটি ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রেই বঙ্গভ্যাক্স কার্যকর। যার প্রমাণ মিলেছে বানরের শরীরে পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। প্রাথমিক ফলাফলে আমাদের টিকা বানরের শরীরে নিরাপদ এবং কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভ্যাকসিনেটেড বানরের শরীরে করোনাভাইরাসের ডেল্টাসহ অন্যান্য ভেরিয়েন্ট প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ স্টাডি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চূড়ান্ত ফলাফলে বঙ্গভ্যাক্স টিকা ডেল্টাসহ অন্যান্য ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই উন্নত বিশ্ব করোনা মোকাবিলায় যে নতুন ভ্যাকসিনের কথা বলছে, সেই নতুন ভ্যাকসিনটি হতে পারে বঙ্গভ্যাক্স। এমনটাই দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
গ্লোব বায়োটেকের শীর্ষ কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন আরও বলেন, আমাদের ভ্যাকসিনটি শতভাগ সফল, কারণ এক বছর আগে যখন প্রথম ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল তখন করোনার এতো রূপ আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে বর্তমানে প্রচলিত বেশিরভাগ ভ্যাকসিন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে খুব একটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গভ্যাক্স ভ্যাকসিন বিশ্বকে এ করোনা সংকট থেকে উদ্ধার করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও একইভাবে কাজ করবে। তাই আমরা যদি এ টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শেষে বাজারে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে ডেল্টাসহ করোনার অন্যান্য ভেরিয়েন্টের যে মহামারি চলছে সেটা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।
গ্লোব বায়োটেক উদ্ভাবিত বঙ্গভ্যাক্সের বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই টিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর ১টি ডোজেই এনিমেল ট্রায়ালে কার্যকর অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আশা করছি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালেও একইভাবে ফলাফল পাওয়া যাবে। এই টিকা সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাসমুক্ত এবং শতভাগ হালাল। যদি দ্রুত টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করা যায়, তবে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীর সেবায় বঙ্গভ্যাক্সকে উৎসর্গ করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ জুলাই ওষুধ প্রস্তুতকারী গ্লোব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকা তৈরির কাজ শুরুর কথা জানায়। সেই টিকা খরগোশ ও ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে বলেও তখন জানানো হয়।
পরে গত বছরের ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত বঙ্গভ্যাক্স টিকাকে কোভিড-১৯ টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞদল বঙ্গভ্যাক্সের গবেষণাগার পরিদর্শন করে সব তথ্য-উপাত্ত ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নথিপত্র পর্যালোচনা করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অগ্রগতিতে সহযোগিতা করে। পরবর্তী সময়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ওই গবেষণাগার ও উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন সাপেক্ষে গত ২৮ ডিসেম্বর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি দেয়।
এবি/এসএন
