• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেঁয়াজের ঝাঁজে ভরপুর পুষ্টি

পেঁয়াজের ঝাঁজে ভরপুর পুষ্টি

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

জাতি হিসেবে বাঙালির সঙ্গে একটা কথা আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে, তা হল- ‘বাঙালির পেঁয়াজ খাওয়া মাথা’। বহুল প্রচলিত এই বাক্যটির বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। পেঁয়াজের সঙ্গে বাঙালির রসুই ও রসনা বিলাসের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালি পরিবারের রান্না-বান্না কল্পনাই করা যায় না। সব ধরণের রান্নায় পেঁয়াজের বহুমুখী ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় আইটেমের নাম ‘পিঁয়াজু’। এই পেঁয়াজ পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি মশলা জাতীয় গুল্ম।

পরিচয়
পেঁয়াজ একটি সর্বজন পরিচিত কন্দমূল। সূর্যের কিরণ বিশেষভাবে গ্রহণ করতে পারে বলেই পেঁয়াজের পাতা গাঢ় সবুজ হয়। ভেষজগুণে ভরপুর পেঁয়াজ। বাংলাদেশে এটি কাঁচা, ভাজি ও রান্নার কাজে সমানভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পেঁয়াজের সবুজ পাতাকে ‘পেঁয়াজ কলি’ বলা হয়।

কী আছে পেঁয়াজে

প্রতি ১০০ গ্রাম পেঁয়াজে পানি রয়েছে ৮৬.৮ শতাংশ, প্রোটিন ১.২ শতাংশ, শর্করা ১১.৬ শতাংশ, ক্যালসিয়াম ০.১৮ শতাংশ, ফসফরাস ০.০৪ শতাংশ, আয়রন ০.৭ শতাংশ।

কৃষি গবেষক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, পেঁয়াজে আছে ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), বি-২ (রিবোফ্লাবিন), বি-৩ (নিয়াসিন), বি-৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড), বি-৬, বি-৯ (ফোলেট) ও ভিটামিন সি। পেঁয়াজ শরীরে শক্তি জোগায়, বিভিন্ন ভিটামিনের গুণ দিয়ে পেঁয়াজ মানব দেহকে সাবলীল রাখতে সহায়তা করে।

উপকারিতা

সাধারণ রোগ নিরাময়ে পেঁয়াজ : সাধারণ সর্দিজ্বর, শরীর গরম হওয়া, কপাল ভার, নাক বন্ধ ও জ্বর জ্বর ভাব হলে পেঁয়াজ কেটে নাক দিয়ে ঝাঁজ ভেতরের দিকে টানলে অস্বস্তিভাব দূর হয়।

হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ : যারা কার্ডিভাসকুলার ফাংশনের জটিলতায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন দুই চা চামচ পেঁয়াজের রস পান করুন। এটা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে হার্টের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি কাঁচা পেঁয়াজ সালাদ হিসেবে খাবারের সঙ্গে রাখতে পারেন।

দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে : বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। কিন্তু নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়ার মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।

অ্যাজমা দূর করে : যারা অ্যাজমাজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত দিনে দুইবার এক চা-চামচ করে পেঁয়াজের রস খান। বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ গরম পানিতে এক চা-চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া ও এক চা-চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাদের জন্য পেঁয়াজ অত্যন্ত কার্যকরি একটি টোটকা। দুপুরের খাবারের পর এক টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস ও সমপরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে পান করলে পেট পরিষ্কার হবে।

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে : অনেকেই আছেন, যাদের নাক দিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই রক্ত পড়ে। এমন কেউ চাইলে পেঁয়াজের ঝাঁজ নাক দিয়ে টেনে ভিতরে নিন। উপকার পাবেন।

অর্শ : দেশের বহু মানুষ অর্শ রোগে ভুগে থাকেন। অর্শ রোগ মানুষকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয়। এই রোগ নিরাময়ে পেঁয়াজ খুবই কার্যকরী। রস করে, সালাদ করে অথবা যেকোনোভাবে পেঁয়াজ খেলে তা অর্শ রোগ নিরাময়ে কাজ করে।

গরমের আরাম পেঁয়াজে : অত্যধিক গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকের তৃষ্ণা বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ খান। পানির তৃষ্ণা ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি দ্রুত কমে যাবে।

কানের যত্নে পেঁয়াজ : অনেকের কানে পুঁজ হয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের কানে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস একটু গরম করে ২-১ ফোঁটা কানে দিলে ঘা সেরে যায়।

বমি বমি ভাব দূর করে : বমি বমি ভাব দূর করতে ৪-৫ ফোঁটা পেঁয়াজের রস এক কাপ কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। বমি বমি ভাব ও অস্বস্তি দূর হবে।

বিষফোঁড়া ফাটাতে পেঁয়াজ : শরীরের যেকোনো জায়গায় বিষফোঁড়া টনটন করছে? তাহলে পেঁয়াজের একটু রস ফোঁড়ায় লাগিয়ে দিন। ব্যস, ফোঁড়া যে কখন ফেটে যাবে, টেরও পাবেন না।

মুখের ইনফেকশন দূর করে : পেঁয়াজ মুখের দুর্গন্ধ ও ইনফেকশন দূর করে। তবে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ : দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। আর শরীরে ইনসুলিন বেড়ে গেলে এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে ডায়াবেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : চিকিৎসা গবেষকরা বলছেন, কোলন ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ থেকে নিরাময়ে পেঁয়াজ খুবই কার্যকরি। পেঁয়াজে থাকা উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

 

এবি/এসএন

২৯ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।