• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘লাল চাল-সাদা চাল’ কোনটি সেরা

‘লাল চাল-সাদা চাল’ কোনটি সেরা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

তিন দশক আগেও দেশের গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকিছাঁটা লাল চাল খাওয়ার প্রচলন ছিল। লাল চালের ভাত রান্না করলে এর মিষ্টি বাদামি ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত।এখন দিন পাল্টে গেছে। গ্রামে এখন আর আগের মতো ঢেঁকি পাওয়া যায় না। হাটে-বাজারে এখন আধুনিক মেশিনে ধান ভাঙানো হয়। মেশিনে ভাঙানো লাল চাল আজ পরিণত হয়েছে বিবর্ণ সাদা রঙে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখনও লাল চালের প্রতি আগ্রহ ধরে রেখেছেন। দেশে নতুন করে লাল চাল বা বাদামি চালের বাজার গড়ে উঠেছে।

তবে সাদা চাল মানেই কী খারাপ? সব সাদা চালই কী ক্ষতিকর? না; মোটেই তা নয়। অনেক সাদা চালও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে লাল চাল অবশ্যই সাদা চালের চেয়ে পুষ্টিগুণে অনেক এগিয়ে। এটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। তাই ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য ‘সাদা চাল ও লাল চালের’ নানা দিক নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে। চলুন জেনে নিই লাল চাল সম্পর্কে-

নাম পরিচয়
লাল চাল আর সব চালের মতোই সাধারণ একটি চাল। এতে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন। যে কারণে এটা লালচে দেখায়। ঢেঁকিতে ছাঁটাই করলে সব চালই বেশ লালচে দেখায়। কিন্তু মেশিনে ছাঁটাই করার কারণে চালের ওপরে থাকা অ্যান্থোসায়ানিনের প্রলেপ উঠে যায়, ফলে চাল সাদা দেখায়।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাল চালের কয়েকটি জাত বাংলাদেশে পাওয়া যায় বা চাষাবাদ হয়। এর মধ্যে অন্যতম শালকেলে, ষাটিয়া, কেলে আউশ, ভুতমুড়ি, কেলাস, অগিবাণ, খাড়া ও লাল দুধেশ্বর।

লাল চালের উপকারিতা
পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য বিষেশজ্ঞরা বলছেন, লাল চালে একাধিক রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওর ম্যাগনেশিয়াম। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও শ্বাসকষ্টের সমাধান হিসেবেও লাল চালের জুড়ি মেলা ভার।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : লাল চালে প্রচুর আয়রণ রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করে।

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ : এই চাল দেহের পালমোনারি ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে। যা দেহের অক্সিজেন সার্কুলেশন ঠিক রাখে। এতে শ্বাসকষ্ট দূর হয়।

হাড় মজবুত করে : লাল চালে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের হাড় গঠন ও মজবুতকরণে সহায়তা করে। এছাড়া হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়ে লাল চাল অত্যন্ত কার্যকরী।

ওজন কমাতে লাল চাল : যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্যই লাল চাল। এই চাল পাচক বা হজম ক্রিয়া উন্নত করে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না। এছাড়া কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর করতেও লাল খুবই কার্যকরী।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাল চাল : লাল চালে ফাইবার বেশি থাকে। এই ফাইবার দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া দেহের অন্ত্র ঠিক রাখতে লাল চাল খুব কার্যকরী। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ চাল। সাদা চাল এর অন্যতম কারণ। কিন্তু লাল চাল নিয়মিত খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে কোলন, লিউকেমিয়া ও স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকি কমায় লাল চাল।

কোথায় পাবেন লাল চাল
ভারত, ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে লাল চালের চাষাবাদ হয়। বাংলাদেশেও এই চালের উৎপাদন আছে। তবে সাধারণত বাংলাদেশে লাল চাল বলতে ঢেঁকিছাঁটা চালকেই বোঝান হয়। ঢেঁকিতে ছাঁটার পর চালের ওপর লাল আস্তরণ থাকে, এজন্য এটাকেই বাজারে লাল চাল বলে বিক্রি করা হয়। দেশের সব বাজারেই এখন লাল চাল পাওয়া যায়।

সাদা চাল
স্বাস্থ্যের জন্য এই চাল মোটামুটি ভালো। মেশিনে ভাঙানোর কারণে এই চাল সাদা হয়। এছাড়া বর্তমানে কোনা কোনো অটো রাইস মিলে চাল প্রস্তুতের সময় নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ফলে চাল আরও সাদা হয়। এই চালে পুষ্টিগুণ কম থাকে। স্বাদ-ঘ্রাণও লাল চালের মতো নয়। মেশিনে ভাঙানোর কারণে সাদা চালের ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্থোসায়ানিন নষ্ট হয়ে যায়। যা পুষ্টিগুণ কমিয়ে দেয়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত করার কারণে সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা বেশি হয়ে যায়। ফলে এই চাল শরীরের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা ওজন বৃদ্ধিসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে।

সব সাদা চালই খারাপ নয় : পুষ্টিবিদ ও কৃষিবিদরা বলছেন, সাদা চাল মানেই খারাপ নয়। এর মধ্যে ব্যতিক্রমও রয়েছে। সাদা চালের মধ্যে বাসমতি ও ‘হোল গ্রেইন’ চাল বেশ ভালো। এই দুই প্রকারের চালে ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ এর মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ নয়।

 

এবি/এসএন

২৮ জুলাই ২০২১, ০৫:৩৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।