• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন এক সুস্বাদু খাবার গরুর চামড়া

নতুন এক সুস্বাদু খাবার গরুর চামড়া

ফিচার ডেস্ক

একটা সময় গরু, ছাগল বা সমজাতীয় পশুর ভুঁড়ি ও খাদ্যনালী খাওয়ার প্রচলন ছিল না। ধীরে ধীরে মানুষ গরু-ছাগলের নাড়ি-ভুঁড়ি ও খাদ্যনালী খেতে শুরু করেছেন। বর্তমানে ভুঁড়ি ও খাদ্যনালী অনেকেরই প্রিয় খাবার। তবে খাবার হিসেবে এবার নতুন করে তালিকায় উঠতে যাচ্ছে গরুর চামড়া। বিশ্বের অন্যান্য দেশে গরু বা অন্যান্য পশুর চামড়া খাওয়ার প্রচলন থাকলেও বাংলাদেশে ততটা প্রচলিত ছিল না।

চট্টগ্রামের কয়েকটি অঞ্চলে গরুর চামড়া খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। দিনে দিনে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রমেই তা সারা দেশেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চামড়া শিল্প মূলত পোশাক, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ইত্যাদি তৈরির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেশে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। কাঙ্খিত দাম না পেয়ে চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার সময় দেশে প্রচুর চামড়া পাওয়া যায়। কিন্তু তার সঠিক দাম পাওয়া যায় না।

কাজেই চামড়া যদি সঠিক নিয়ম মেনে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে চামড়ার হারিয়ে যাওয়া বাজার আবারও ফিরে পাওয়া সম্ভব।

গরুর চামড়া খাওয়ার প্রচলন কোথায় : আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই গরুর চামড়া খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। অনেক দেশেই উচ্চ মূল্যে প্রক্রিয়াজাত গরুর চামড়া বিক্রি করা হয়। যা খাবার হিসেবে আফ্রিকার দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ায় গরুর চামড়া খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এসব দেশে গরুর চামড়া দিয়ে নানা স্বাদের বাহারি খাবার তৈরি করা হয়।

গরুর চামড়ার পুষ্টিগুণ : প্রাণীদেহের সবচেয়ে বড় অংশ ত্বক। আকারভেদে গরুর চামড়ার ওজন ১০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। এতে ভিটামিন ও মিনারেল না থাকায় তা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না।

উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম চামড়ায় রয়েছে প্রোটিন ৪৭ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম, চর্বি ১ গ্রাম, আঁশ ০.০২ গ্রাম ও পানি ৪৫ গ্রাম।

চামড়ার যত ব্যবহার : মূলত পোশাক, জুতা, ব্যাগ, বেল্টসহ এ ধরণের কাজেই চামড়ার ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পশুর চামড়া থেকে জিলাটিন বের করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ওষুধ ও নানা রকম প্রসাধনী তৈরি করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশুর চামড়ার জিলাটিন থেকে তৈরিকৃত প্রসাধনী ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

চামড়া কিভাবে খাবার হবে : পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা বেশ ঝামেলাপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে চামড়া থেকে লোম ছাড়ানো বেশ বিরক্তিকর। তবে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কিভাবে গরুর চামড়া থেকে লোম ছাড়ানো যাবে, তা ভিডিও চিত্রে দেখে নেয়া যেতে পারে। এ ধরণের অসংখ্য ভিডিও ইউটিউবে রয়েছে। লোম ছাড়ানোর পর এটি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পছন্দ ও স্বাদ মতো মশলা দিয়ে ভাঁজি অথবা সুপ হিসেবে খাওয়া যায়। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার ‘কিকিল’ ও নাইজেরিয়ার ‘পনমো’ বেশ জনপ্রিয়। এ দুটি খাবারের অসংখ্য ভিডিও ইউটিইউব থেকে দেখে নিতে পারেন।

এছাড়া চামড়া দিয়ে হালিম, চটপটি রান্না করলেও তা মজাদার হয়। আর গরম চামড়া দিয়ে ভাত ও রুটি বেশ মজাদার।

খাবার হিসেব চামড়া কতটা স্বাস্থ্যকর?

গরুর চামড়া খাদ্য হিসেবে বেশ উপকারী। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিলাটিন। যা মানবদেহের হাড় ও ত্বক গঠনে ব্যাপক কার্যকরী। ভালো করে গরম পানিতে সেদ্ধ করে চামড়া খাবারে পরিণত করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। এতে কোনো ভিটামিন বা মিনারেল নেই। বাড়তি চর্বিও নেই চামড়ায়। যে কারণে চামড়ায় কোলেস্টেরলের মাত্রা হালকা। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে না বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।

 

এবি/এসএন

২২ জুলাই ২০২১, ০৪:০১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।