• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের সবজি মুলা শাকের পুষ্টিগুণ

শীতের সবজি মুলা শাকের পুষ্টিগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ভোজনরসিক বাঙালির খাবার তালিকায় প্রতিদিন শাক থাকা চাই-ই চাই। লাল শাক, পুঁইশাক, পালং শাকসহ মৌসুমী যে কোনো শাকই বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এখন শীত আসন্ন। শীতের সবজি এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে। হাটে-বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে মুলা শাক। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি শাক। এই শাকে রয়েছে ভেষজ গুণাগুণ।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে মুলা শাকের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা নিয়ে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক-

পরিচয়

মুলা মূলত জাপানি একটি সবজি। বাংলায় যার অর্থ ‘বৃহৎ মূল’। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় Daikon, Raphanus sativus, White Radish; ইত্যাদি। চীনারা এটিকে সাদা গাজর বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Raphanus sativus var. longipinnatus। এটি হালকা গন্ধবিশিষ্ট, বড় ও সাদা রঙের 'মূল' জাতীয় সবজি। হিন্দি ও উর্দুতে একে 'মূলি' বলা হয়। আর এই মুলা থেকেই পাওয়া যায় মুলা শাক। যা পুষ্টিগুণে অত্যন্ত উপকারী ও জনপ্রিয়।

মুলা শাক

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও উইকিপিডিয়া বলছে, মুলা শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড ও মলিবডেনামসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মুলায় আছে

ক্যালরি ৬৬ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ৩.৪ গ্রাম
সুগার ১.৮৬ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম
চর্বি ০.১ গ্রাম
প্রোটিন ০.৬৮ গ্রাম
ভিটামিন বি১ ০.০১২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২ ০.০৩৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩ ০.২৫৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ১৪.৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৩৪ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ০.০৬৯ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৩৩ মিলিগ্রাম এবং
জিংক ০.২৮ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, মুলা শাক-

রক্তচাপ কমায় : এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে। এছাড়া এতে রয়েছে ফোলেট, যা রক্তচাপ ও রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।

কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে : কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত মুলা শাক বেশ কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন। যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ওজন কমায় : এই শাকে রয়েছে প্রচুর আঁশ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান, যা উপাদান ওজন কমাতে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে : মুলা শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। যা দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

কিডনি সুরক্ষিত রাখে : চিকিৎসা গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত পরিমাণ মতো মুলা শাক খেলে কিডনীতে জমে থাকা পাথর মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : কোলন ক্যান্সার ছাড়াও অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে মুলা শাকে। যা চিকিৎসা গবেষণা প্রমাণিত।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় : এই শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের সতেজতা ধরে রাখে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হজমশক্তি বাড়ে : এই শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যামাইনো অ্যাসিড। আর এই উপাদান মেটাবলিজম ক্ষমতা উন্নত করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : নিয়মিত মুলা শাক খেলে পেটের সমস্যা দূর হবে। এতে রয়েছে আঁশ, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় : যারা দীর্ঘদিন হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তারা নিয়মিত মুলা শাক খেতে পারেন। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। এছাড়া এটি অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস ও বাত ব্যথা নিরাময়েও বেশ কার্যকরী।

রক্তস্বল্পতা দূর করে : এই শাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি, যা রক্ত স্বল্পতা দূর করে। কারণ আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী নানা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ফলে নিয়মিত মুলা শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

দাঁতের ক্ষয় রোধ করে : দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। যা মুলা শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।

চোখের সুরক্ষায় : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি, যা চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

চর্মরোগ নিরাময় : এতে রয়েছে নিয়োক্সেথিন ও ভায়োল্যাক্সানথিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এই উপাদানগুলো চর্মরোগ নিরাময় ও ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে : মুলা শাকে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা তারুণ ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, এই সময় ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন/আরএ

১১ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।