• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাংসের পুষ্টিতে ভরপুর মটরশুঁটি

মাংসের পুষ্টিতে ভরপুর মটরশুঁটি

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মটরশুঁটি। শীতের সবজি। এটি কাঁচা অথবা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। এছাড়া শুকিয়ে ডাল হিসেবেও মটরশুঁটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এখন কাঁচা মটরশুঁটি খাওয়ার প্রচলন বেশি। বিশেষ করে সালাদ, নুডলস ও বিকেলের হালকা নাস্তায় কাঁচা অথবা সেদ্ধ মটরশুঁটি বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া এটি পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুরীসহ বিভিন্ন তরকারিতে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, নিরামিষাশী মানুষদের আমিষের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে কার্যকরী একটি সবজি বা ডাল এই ‘মটরশুঁটি’। মাংসের চাহিদা পূরণে উত্তম উদ্ভিজ উৎস এটি।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে মটরশুঁটিতে।

পরিচয়

মটরশুঁটি হলো লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ। যা Pisum sativum এর গোলাকার বীজ। প্রতিটি মটরশুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে। যদিও এটি এক প্রকারের ফল। এটি মূলত সবজি হিসাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়। শুকনো মটরশুটি ছিলে ভেঙে ডাল হিসেবেও খাওয়া যায়। এটি Sativum প্রজাতির একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। বুনো মটরশুঁটি মধ্যপ্রাচ্যে বেশি পাওয়া যায়। প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসারে নিওলিথিক যুগের সিরিয়া, তুরস্ক ও জর্ডানে মটরশুঁটির সন্ধান মেলে। এছাড়া প্রাচীন মিশরের নীল নদের ব-দ্বীপ এলাকায় এটি পাওয়া যায়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষের হরপ্পা এলাকায় ২২৫০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মটরশুঁটির চাষ হতো।

পুষ্টি উপাদান

ভারতীয় প্রসিদ্ধ গণমাধ্যম জি নিউজ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, আঁশ, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ক্যালরি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংকসহ নানা ধরণের খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুঁটিতে রয়েছে

ক্যালরি ৩৩৯ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ১৪.৫ গ্রাম
সুগার ৫.৭ গ্রাম
খাদ্য আঁশ ৫.১ গ্রাম
চর্বি ০.৪ গ্রাম
প্রোটিন ৫.৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৩৩.০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ১০৮ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াাম ২৪৪ মিলিগ্রাম
জিংক-১.২ মিলিগ্রাম। এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলস।

উপকারিতা

মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের কেন্দ্রীয় খাদ্য ডাটা সহায়িকায় প্রকাশিত তথ্য বলছে, মটরশুঁটিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। মটরশুঁটি খেলে-

প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় : মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। গবেষকরা বলছেন, মাংসের চাহিদা পূরণ করতে এক বাটি মটরশুঁটি যথেষ্ট। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড, যা কিনা প্রোটিনের প্রধান উৎপাদক।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : মটরশুঁটির অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এতে থাকা অন্যান্য খনিজ ও ভিটামিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে : মটরশুঁটিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, জিংক ও অন্যান্য খনিজ উপাদান। এসব উপাদান ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দারুণভাবে সহায়তা করে। ত্বক টানটান করতে মটরশুঁটির জুড়ি মেলা ভার। এটি বলিরেখা দূর করে।

ওজন কমায় : দেহের বাড়তি মেদ ঝরাতে চাইলে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন মটরশুঁটি। এতে রয়েছে কম মাত্রায় চর্বি ও উচ্চ মাত্রায় খাদ্যআঁশ, যা দেহের মেটাবলিজম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেহের মেদ ঝরাতে সহায়তা করে। ফলে বাড়তি ওজন কমে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : এতে খুব অল্প মাত্রায় শর্করা রয়েছে। তবে আঁশ ও অন্যান্য ভিটামিনে ভরপুর মটরশুঁটি। কাজেই এটি নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বের করে দিতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরা একটি সবজি মটরশুঁটি। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিংক দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান দেহের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : মটরশুঁটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি, যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র : জি নিউজ, আনন্দবাজার, উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

এবি/এসএন/আরএ

০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।