• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে পরে যা করণীয়

কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে পরে যা করণীয়

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় সামর্থবানদের ওপর পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। সারাদেশে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। গ্রাম কিংবা শহর, সবখানেই এখন কোরবানির পশুর হাট বসেছে। সবাই সামর্থ অনুযায়ী পশু কিনছেন কোরবানির জন্য। গ্রামে কোরবানির পশু লালনপালন তেমন কষ্টসাধ্য নয়। তবে শহরের বাসিন্দারা কোরবানি পশু কিনে তা লালন পালন করতে গিয়ে প্রায়ই বিপাকে পড়েন। পশু রাখার যথাযথ জায়গা ও পশুখাদ্য না থাকায় দু-চারদিনের জন্য পশু লালনপালনেও যেন বিড়ম্বনার শেষ নেই।

আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে ও পরে আমাদের কী করণীয়, ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল।

পশুর যত্ন

খাবার: অধিকাংশ মানুষই কোরবানির জন্য বাজার থেকে কিনে আনা পশুর ওপর নির্ভরশীল। গবাদিপশু লালনপালনে অনভ্যস্ততার কারণে কোরবানির পশু কিনে বাসায় ফিরে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েন। এই বিড়ম্বনার অন্যতম পশুর যতœ ও খাবার। বিশেষ করে শহরের বাসিন্দারা গবাদিপশুর খাবার নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। তারা চাইলেই এখন বাজার থেকে গো খাদ্য কিনে আনতে পারেন। যদি আপনার কিনে আনা পশু বাজারের খাবারে অভ্যস্ত না হয়, তাহলে অল্প অল্প করে খাবার দিন। দু-একদিনের মধ্যেই দেখবেন পশু খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে কোনও অবস্থাতেই কোরবানির পশুকে ভাত, জাউ বা এ জাতীয় খাবার দিবেন না। এসব খাবারে গবাদিপশুর হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে পেট ফুলে যাওয়াসহ প্রাণহানীর আশঙ্কারও তৈরি হয়। তাই অল্প অল্প খড় ও তার সাথে বাজার থেকে কিনে আনা দানা জাতীয় খাবার দিতে পারেন।

গোসল: আপনার কোরবানির পশু যদি গরু, মহিষ বা উট হয়ে থাকে, তাহলে প্রতিদিন স্বাভাবিক ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করান। এতে পশুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। পশুর খাবারের প্রতি রুচি বাড়বে।
আর আপনার কোরবানির পশু যদি ছাগল, ভেড়া বা এজাতীয় হয়, তাহলে গোসল না করানো ভালো। তবে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে।

যেসব সতর্কতা জরুরি

কোরবানির পশু বাসায় আনার পর মানুষ আপনার পশুটি দেখতে ভিড় করবে। বাড়ির বাচ্চারাও কোরবানির পশুর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে। এটা ঈদের অন্যতম একটি আনন্দ। কিন্তু একটা বিষয় সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন পশু কোনও ভাবেই আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে। বেশি মানুষের আনাগোনা পশুর মনে ভীতির সঞ্চার করে। এতে করে পশু অতিরিক্ত ডাকাডাকি ও ছোটাছুটি শুরু করতে পারে। এতে পশু স্বাস্থ্য ও বাসার পরিবেশ বিঘ্ন ঘটতে পারে।

পশু রাখার সঠিক জায়গা : বাজার থেকে পশু কিনে আনার পর এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে শীতল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আছে। অন্ধকার ও গুমোট জায়গায় পশু রাখলে পশুর স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে।

শিশু ও বয়স্কদের দূরে রাখুন: কোরবানির পশু বাড়িতে আনার পর বাচ্চাদের আটকে রাখা দূরূহ। তারা সুযোগ পেলেই পশুর কাছাকাছি হয়ে তাকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়টি খেয়াল রেখে, শিশু ও বয়স্কদের কোরবানির পশু থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখুন।

পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা : বাজার থেকে কিনে আনা পশু একটি নতুন পরিবেশে থাকতে শুরু করে। নতুন পরিবেশে পশুর ছটফটানি বেড়ে যেতে পারে। তাই শক্ত খুঁটির সঙ্গে মজবুত রশি দিয়ে পশু বেঁধে রাখুন। মাঝে মাঝে দেখে নিন পশু বেঁধে রাখা রশি আলগা হয়ে গেছে কিনা। পশু বেঁধে রাখার জন্য অবশ্যই পাটের রশি অথবা সুতি রশি ব্যবহার করা উচিত। এতে পশু ছুটাছুটি করার চেষ্টা করলেও রশিতে গলা কেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

পশু জবাইয়ের পরে করণীয়

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন: কোরবানির দিন একই পাড়ায় মহল্লায় একই সময়ে অনেক পশু জবাই হয়ে থাকে। তাই পশু জবাইয়ের আগে এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন, যে জায়গাটি সুষ্ক, উঁচু ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঢালু ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় পশু জবাই করলে পশুর চামড়া নোংরা হয়ে যেতে পারে।

মাংস কাটার অস্ত্র প্রস্তুত: পশু কাটার অস্ত্রপাতি দুই তিনদিন আগেই প্রস্তুত করে রাখুন। অস্ত্র, ছুরি ও অন্যান্য ছোট ছোট অস্ত্র ধাঁর করিয়ে রাখুন। এতে পশু জবাই ও কাটাকাটির কাজ সহজ হবে।

জবাই করার সময় সতর্কতা: পশু জবাইয়ের সময় অনেকেই আহত হয়ে পড়েন। পশুর লাথিগুতোঁয় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই পশু জবাইয়ের সময় অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বয়স্ক ও অল্প বয়সীদের পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার না করাই ভালো। পশু জবাই করার সময় মাটিতে যেখানে পশুর ঘাঁড় থাকবে, ঠিক সেই জায়গায় দেড় ফুট লম্বা ও দেড় ফুট চওড়া গর্ত করে নিন। এতে পশুর রক্ত বাইরে গড়িয়ে পড়বে না।

পশুর বর্জ্য কোথায় ফেলবেন: পশু জবাইয়ের পর অনেকেই খামখেয়ালী করে ময়লা ও পশুবর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে রাখেন। এটা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো কিছু নয়। পশু জবাইয়ের পর রক্ত তিন-চার ফুট গভীর গর্তে ফেলে মাটিচাপা দিন। মাটিতে ব্লিচিং পাউডার অথবা লবণ ছিটিয়ে দিন। এতে দুর্গন্ধ বের হবে না এবং শিয়াল-কুকুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য তুলে ফেলতে পারবে না।

এছাড়া পশুর পেটে থাকা বর্জ্য একটি নির্দ্রিষ্টস্থানে ফেলুন এবং তা মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। তবে আপনি যদি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজ নিজ এলাকার বর্জ্য নিষ্কাশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।

এভাবেই একটু সচেতন হলে, আমাদের ঈদের আনন্দ হতে আরও আনন্দময়। আপনার চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আপনারই দায়িত্ব। তাই আসুন, নিজে পরিষ্কার থাকি, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি, সুস্থ থাকি।

 

এবি/এসএন

১৭ জুলাই ২০২১, ০৫:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।