• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি বেশি হাঁটুন, সুস্থ থাকুন

বেশি বেশি হাঁটুন, সুস্থ থাকুন

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্থতাই সকল সুখের মূল। শরীর ভালো তো সব ভালো। আমরা যখন অসুস্থ থাকি, তখনই কেবল অনুভব করি সুস্থ থাকার তাৎপর্য। সুস্থ থাকার জন্য আমরা কত রকম কিছু করছি। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিরাপদ পানি পান, ঘুমসহ নানা নিয়ম মেনে চলেছি শুধু একটু সুস্থ থাকার জন্য। সুস্থতার জন্য এগুলো অবশ্যই দরকার। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার শরীরচর্চা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা প্রতিনিয়ত খাবার গ্রহণ করছি। এই খাবারের একটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ আমাদের শরীরেই থেকে যাচ্ছে। দিনে দিনে শরীরে নানা জটিলতার পেছনে খাবারের ক্ষতিকর টক্সিন দায়ী। এই টক্সিন আমরা শরীর থেকে বের করি না। যে কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে দিনে অন্তত ৩০ মিনিট একটানা হাঁটতে হবে। সপ্তাহে ৫/৬ দিন অবশ্যই হাঁটতে হবে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললে নানা ধরণের রোগ থেকে নিজেই নিজের শরীরকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

আসুন জেনে নিই হাঁটার কিছু উপকারী দিক-

যারা নিয়মিত হাটাহাটি করেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কম থাকে। হাঁটার সময় শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের হয়ে যায়। সেই সঙ্গে দেহের জন্য উপকারী এইচডিআর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য হাঁটার বিকল্প নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেক কম। এছাড়া যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের রক্তচাপ হাঁটার কারণে নিয়ন্ত্রণ হয়। এতে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জাদুকরি প্রভাব:
যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, তাদের জন্য হাঁটার অভ্যাস অত্যন্ত উপকারি। ওজন নিয়ন্ত্রণ অথবা ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন শরীর থেকে ৬০০ ক্যালরি বার্ণ বা ক্ষয় করতে হবে। আর এর জন্য হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলাই হবে সহজ ও কার্যকরী সমাধান। আপনি যত দ্রুত গতিতে হাঁটার অভ্যাস করবেন এবং যত বেশি হাঁটবেন, আপনার ক্যালরি তত ক্ষয় হবে। এভাবে খুব সহজেই আপনি পেতে পারেন অতিরিক্ত ওজনমুক্ত দেহ। এছাড়া হাঁটার কারণে আপনার দুর্বল হয়ে যাওয়া পেশীগুলো আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। পেশীর শক্তি ফিরে আসবে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে:
আপনি যদি নিয়মিত হাঁটেন, তাহলে আপনার দুর্বল হয়ে যাওয়া স্মৃতিশক্তি আবারও ফিরে আসবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। ব্রেনের ধারণ ক্ষমতাও কমে আসে। স্মৃতিভ্রম হয়। এগুলো হয় মূলত মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে। কিন্তু আপনি নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। সপ্তাহে যদি অন্তত ৬ মাইল হাঁটেন, তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি অটুট থাকবে।

জয়েন্টের ব্যথা নিরাময়:
অনেকেই হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথায় কাতর। ব্যথা থেমে মুক্তি পেতে অনেকেই বিশ্রাম শুরু করেন, হাঁটা চলা বন্ধ কম করেন। কিন্তু এটা একদমই ভুল। গবেষকরা বলছেন, নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের জয়েন্টের ব্যথা দ্রুত নিরাময় হয়। হাঁটা অত্যন্ত কার্যকরী একটি শরীরচর্চা।

শারীরিক শক্তি ও পেশী গঠন:
অনেকেই শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন। দুর্বলতা কাটাতে শুয়ে বসে বিশ্রাম করেন। এতে তাদের দুর্বলতা আরও বাড়ে। দুর্বলতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া। আমাদের শরীরের পেশী যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন শরীরও আর ধকল নিতে পারে না। তাই, পেশী শক্ত ও মজবুত হলে শারীরিক দুর্বলতাও কমে আসে। আর পেশী মজবুতকরণ ও শারীরিক দুর্বলতা কমানোর এক কার্যকরী ও দ্রততম উপায় হলো ‘হাঁটা’। নিয়মিত হাঁটলে পেশী মজবুত হয় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়।

মানসিক পুনর্গঠন ও ভিটামিন ডি:
গবেষকরা বলছেন, হাঁটার জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় হলো ভোর সকাল বেলা। অর্থাৎ দিনের প্রথম ভাগেই যদি কেউ হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলেন, তাহলে তিনি দিনের প্রথম সতেজ আবহাওয়া উপভোগ করতে পারবেন। এতে দেহ ও মন চনমনে হয়ে উঠে। এছাড়া সকালের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকায় সকালের বায়ু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া সকালের সূর্যকিরণে রয়েছে ভিটামিন ডি। যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাজেই সকালে হাঁটার অভ্যাস একজন মানুষ সুস্থ রাখতে পারে দিনের পর দিন।

 

এবি/এসএন

১৬ জুলাই ২০২১, ০৮:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।