• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিগুণে সেরাদের সেরা কলমি শাক

পুষ্টিগুণে সেরাদের সেরা কলমি শাক

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

কলমি শাক। অর্ধ-জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কলমি শাক যেন একটি আবেগের জায়গা। এখন শরৎকাল। সারা দেশেই খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরপুর। এই পানিতে এখন হেলে দুলে তকতক করছে কলমি শাক। পুষ্টিগুণে অন্য শাকের চেয়ে মোটেও পিছিয়ে নেই কলমি শাক।

খাদ্য হিসেবে কলমি শাক সবার পরিচিত ও জনপ্রিয়। কিন্তু এতে ঠিক কী কী উপাদান রয়েছে, তা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই আমরা আপনাদের জন্য এমন কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, যা থেকে আপনারা জানতে পারবেন ‘কলমি শাক’-এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

পরিচয়

কলমি শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea aquatica। বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে এটির জন্ম। ইংরেজিতে একে বলা হয় water spinach, river spinach, water morning glory, water convolvulus, Chinese spinach, Swamp cabbage।

কী আছে কলমি শাকে

উইকিপিডিয়া ও কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) বলছে, কলমি শাকে প্রোটিন, আঁশ, ক্যালরি, সোডিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকে রয়েছে

ক্যালরি ২৯ কিলোক্যালোরি
সোডিয়াম ১১৩ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৩১২ মিলিগ্রাম
খাদ্যআঁশ ২.১ গ্রাম
প্রোটিন ৩ গ্রাম
কর্বোহাইড্রেটস ৫.৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম
আয়রন ২.৫ মিলিগ্রাম এবং
জলীয় অংশ ৮৯.৭ গ্রাম।

উপকারিতা

হার্টের যত্নে কলমি শাক : গবেষকরা বলছেন, কলমি শাকে রয়েছে ‘ফাইটোস্টেরল’। যা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভালো থাকে। কাজেই নিয়মিত এই শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে : নিয়মিত কলমি শাক খেলে শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে : রাতকানাসহ দৃষ্টিশক্তি হ্রাসজনিত নানা রোগে যারা ভুগছেন, তারা নিয়মিত কলমি শাক খান। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। যা রাতকানা রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী।

সংক্রমণ দূরে রাখে : কলমি শাকে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সাধারণ সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।

রক্তশূন্যতা দূর করে : যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কলমি শাক খেতে পারেন। এটি শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

জ্বর নিরাময় : অনেকেই জ্বর ও হালকা সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত কলমি শাক খান, তাহলে সাধারণ জ্বর, সর্দি ও কাশি থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।

হাড় মজবুত করে : কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন কে, যা হাড় মজবুত করতে খুবই কার্যকরী। অস্টিওপরোসিস রোগের মতো জটিল হাড়ের রোগ নিরাময়েও কলমি শাক দারুণ ভূমিকা পালন করে। কাজেই নিয়মিত কলমি শাক খেলে হাড়ের রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

হজমশক্তি উন্নত করে : কলমি শাকের অন্যতম প্রধান গুণ হলো- হজমশক্তি উন্নত করা। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ। যা হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। ফলে হজমশক্তি উন্নত হয়।

কলমি শাকের কয়েকটি অজানা ‘টোটকা’

ফোড়া হলে কলমি পাতা একটু আদাসহ বেটে ফোড়ার চারপাশে লাড়িয়ে দিন, ফোড়া গলে পুঁজ বেরিয়ে যাবে।

পিঁপড়া, মৌমাছি কিংবা পোকামাকড় কামড়ালে কলমি শাকের পাতা ডগাসহ রস করে কামড়ানোর স্থানে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কলমি শাকের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। এটি আমাশয় দূর করতেও কার্যকরী।

গর্ভাবস্থায় যেসব মায়েদের শরীরে পানি আসে। তারা কলমি শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে তিন সপ্তাহ খান। শরীরে পানি জমা বন্ধ হবে।

প্রসূতি মায়েদের শিশুরা যদি মায়ের বুকের দুধ কম পায়, তাহলে কলমি শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খান, বুকের দুধ বাড়বে।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) ও আনন্দবাজার (কলকাতা)

 

এবি/এসএন

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।