পুষ্টি ভরা মিষ্টি মরিচ ‘ক্যাপসিকাম’
প্রতিকী ছবি
সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান ক্যাপসিকাম। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। দাম বেশি হলেও ক্যাপসিকামের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশেও এখন প্রচুর ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে। পুষ্টিগুণ ও উপকারী দিক বিবেচনায় খাবার তালিকায় ক্যাপসিকাম রাখতে পারেন। এটি আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপসিকামের উপকারী নানা দিক নিয়ে গবেষণা করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ক্যাপসিকামের পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা চলমান। কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’ ক্যাপসিকাম নিয়ে তথ্যবহুল ও নির্ভরযোগ্য নানা তথ্য প্রকাশ করেছে। আমরা এই পর্বে ক্যাপসিকামের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা নিয়ে কিছু নির্ভরযোগ্য তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নিই, কি আছে ক্যাপসিকামে-
পরিচয়
ক্যাপসিকামের ইংরেজি নাম Capsicum বা Sweet bell pepper। যাকে বাংলায় বলা হয় মিষ্টি মরিচ। এটি উদ্ভিদের সেলেনিয়াম গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। ক্যাপসিকাম নানা রঙের হতে পারে। তবে আমাদের দেশে প্রধানত সবুজ ও লাল রঙের ক্যাপসিকাম বেশি পাওয়া যায়। তবে দেশের নানা জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হলুদ, বেগুনী ও কমলা রঙের ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে।
কি আছে ক্যাপসিকামে
কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, চর্বি ও কার্বোহাইড্রেটসহ নানা উপকারী উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে রয়েছে
প্রোটিন ৮৬০ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৪.৬ শতাংশ
চর্বি ১.৭০ মিলিগ্রাম
ভিটামি সি ৮০ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন এ ৩৭০ মিলিগ্রাম।
এছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, থায়ামিন, লেবোফ্লেবিস, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরাইড ও ফলিক অ্যাসিড।
উপকারিতা
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বিডি হেলথ ডট ওআরজি’তে প্রকাশিত তথ্য বলছে-ক্যাপসিকাম
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রদাহবিনাশী উপাদান, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। ক্যাপসিকামে থাকা সালফার যৌগ ও ক্যারোটেনয়েড লাইকোপেন নানা ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি। এছাড়া পর্যাপ্ত বিটা ক্যারোটিন থাকায় দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে ক্যাপসিকাম সহায়তা করে। নিয়মিত ক্যাপসিকাম খেলে রাত্রিকালীন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে : ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস হজমশক্তি উন্নত করে। ফলে ওজন কমাতে এটি সহায়তা করে। শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়িয়ে দিতেও এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে : এতে রয়েছে লাইকোপেন। যা কার্ডিওভাস্কুলারের নানা জটিলতা দূর করে। ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। এতে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে সাধারণ সংক্রমণ ও রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
আয়রনের ঘাটতি পূরণ : দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে ক্যাপসিকাম খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এতে থাকা ভিটামিন সি আয়রনের অভাবজনিত রোগ দূরে রাখে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে: নিয়মিত ক্যাপসিকামের জুস পান করলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক ও ডায়রিয়ার মতো রোগ নিরাময়ে ক্যাপসিকামের জুস খুবই কার্যকরী।
ত্বক পরিষ্কার রাখে : চামড়া ও মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ কার্যকরী। এটি নিয়মিত খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
ব্যথা নিরাময় করে : দীর্ঘদিনের ব্যথা আপনার পিছু ছাড়ছেনা? আপনি কয়েকদিন নিয়মিত ক্যাপসিকামের জুস পান করুন। পুরনো ব্যথা দূর হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : ক্যাপসিকামে রয়েছে এমন কিছু উপাদান, যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হাড় মজবুত রাখে : ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি দেহের কোলাজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে হাড়ের সন্ধি পরিশোধিত হয়। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন কে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। ফলে হাড় মজবুত থাকে।
পরামর্শ
এটি উপকারী হলেও কিডনী রোগী ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ক্যাপসিকাম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। পরিমিত ও পরিকল্পিত ক্যাপসিকাম খাওয়ার মাধ্যমে আপনিও পেতে পারেন সুস্বাস্থ্য।
তথ্যসূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি), এই সময় ম্যাগাজিন (ভারত), উইকিপিডিয়া ও বিডি হেলথ ডট ওআরজি।
এবি/এসএন