• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্টির জাদুকর ‘মধু’

পুষ্টির জাদুকর ‘মধু’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

পুষ্টিগুণে জাদুকরি ক্ষমতার অধিকারী ‘মধু’। নিয়মিত মধু খাওয়ার অভ্যাস অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি দেয়। বহুল জনপ্রিয় মধু খাবার তালিকার পাশাপাশি এখন চিকিৎসার কাজেও সমান তালে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রোগ নিরাময় ও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে মধুর কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই আমাদের এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে মধুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন দেখে নিই, কি আছে এই পর্বে-

মধুর পুষ্টি উপাদান

খাঁটি মধুতে অন্তত ৪৫টি খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে। গবেষকরা বলছেন, মধুতে কোনো চর্বি ও প্রোটিন নেই। প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে রয়েছে ২৮৮ কিলোক্যালরি। কপার, আয়রন, ভিটামিন বি ও ম্যাঙ্গানিজে সমৃদ্ধ মধু।

ফুলের পরাগের মধুতে থাকে
গ্লুকোজ ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ
ফ্রুক্টোজ ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ
সুক্রোজ ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ এবং
মন্টোজ ৫ থেকে ১২ শতাংশ।

এছাড়া খনিজ উপাদানের মধ্যে মধুতে রয়েছে
অ্যামাইনো অ্যাসিড ২২ শতাংশ
খনিজ লবণ ২৮ শতাংশ এবং
এনকাইম ১১ শতাংশ।

মধুর উপকারিতা

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : মধুতে রয়েছে এনকাইম ও এমন এক শর্করা, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই সহায়ক। এতে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে রয়েছ ডেক্সট্রিন। যা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং হজমক্রিয়া শুরু করে।

শক্তিবর্ধক : খাঁটি মধু শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে শরীরের শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

রক্তশূন্যতা দূর করে : মধুতে রয়েছে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন। যা রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে মধু খুবই কার্যকরি। আর রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় : এতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এক চা চামচ খাঁটি মধু প্রতিদিন ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

ফুসফুসের সংক্রমণ রোধ করে : ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও সংক্রমণ রোধে মধু সবচেয়ে কার্যকরি। অ্যাজমা ও হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। শ্বাসকষ্ট নিরাময়েও মধু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি : যেসব পুরুষ যৌন দুর্বলতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান, উপকার পাবেন।

অনিদ্রা দূর করে : অনেকেই আছেন, যাদের রাতে ভালো ঘুম হয় না। তারা শোবার আগে এক গ্লাস পানিতে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। ঘুম ভালো হবে।

মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় : অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয়। মুখে ঘাঁ হয়। এসব সাধারণ সমস্যা দূর করতে নিয়মিত মধু খান। মুখের দুর্গন্ধ ও ঘাঁ দূর হবে।

দাঁত ও মাড়ি গঠন : অনেকের দাঁতে ক্ষয় হয়। দাঁতে পাথর জমে এই ক্ষয় শুরু হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন।

শরীরের তাপ উৎপাদন : মাস খানিক পরেই দেশে শীতের আমেজ শুরু হবে। ঠান্ডায় শরীরকে উষ্ণ রাখতে চাইলে মধু খান। এটি আপনার শরীরকে ঝরঝরে ও তাজা রাখবে।

পানিশূন্যতা দূর করে : ডায়রিয়া কিংবা যেকোনো ধরণের পানিশূন্যতা পুরণে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। পানিশূন্যতাজনিত দুর্বলতা দূর হবে।

রূপচর্চায় মধু : মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মধুর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। মুখের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ও ত্বক কোমল রাখতে অনেকেই মধু মাস্ক হিসেবে মুখে ব্যবহার করেন।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে : গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। চোখ ভালো থাকবে।

ওজন কমায় : মধুতে কোনো চর্বি বা প্রোটিন নেই। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন। আপনার অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে।

তারুণ্য ধরে রাখে : মধু খাওয়ার ফলে মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয় ও মুখ টানটান হয়। ফলে আমাদের চেহারায় বলিরেখা ও কালো দাগ দূর হয়। যা আমাদের তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময় : দীর্ঘদিনের পুরনো আমাশয়ে ভুগছেন যারা, তারা মধু খেতে পারেন। এতে আপনার আমাশয় দূর হবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : দুই চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ মৌরি গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায় : প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মিশিয়ে খান। এতে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

রক্ত পরিষ্কার রাখে : এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। এটি রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এছাড়া এই পানীয়টি রক্তনালী পরিষ্কার করতেও সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র : গ্লোরি হানি ডট কম, হেলথলাইন ডট কম ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২২ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।