• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাত থেকে বাঁচবেন যেভাবে

বজ্রপাত থেকে বাঁচবেন যেভাবে

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

এখন বর্ষাকাল। সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই সময়ে বজ্রপাত বেড়ে যায়। প্রতিবছর দেশে বজ্রপাতে গবাদিপশু ও মানুষের প্রাণহানী হয়। দেশের নদী তীরবর্তী অঞ্চল, হাওর ও উন্মুক্ত ফসলের মাঠে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। প্রাণহানীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। মানুষের অসচেতনতা ও বজ্রপাত সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা না থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা এই পর্বে বজ্রপাত থেকে বাঁচার কিছু সহজ কৌশল আপনাদের জানাব। তার আগে চলুন বজ্রপাত কি ও কেন হয়, তা জেনে নিই-

বজ্রপাত কি

বজ্রপাত বা খরমযঃহরহম বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বুঝায়। এই সময় উক্ত এলাকার বাতাসের প্রসারন এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দুটি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে। বজ্রপাতে ডিসি কারেন্ট তৈরি হয়।

বজ্রপাতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ ভূগর্ভে চলে যায় সেহেতু এর প্রভাবে ভূগর্ভে অনেক মূলবান পদার্থের খনি বা আকড় হওয়ার সম্ভবনাও কমে যায়।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বায়ুমন্ডলের ওপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায়, নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে ‘থান্ডার ক্লাউড’ বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট জলের কনা থাকে। আর ওপরে উঠতে উঠতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে জলের পরিমাণ যখন ৫ মিলিমিটারের বেশি হয়, তখন জলের অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পারে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আলোর ঝলকানি বা ব্রজপাত হয়।

বজ্রপাতে হতাহত এড়াতে যে সতর্কতা জরুরি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মে-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। তবে সমসাময়িক বছরগুলোতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসেও বজ্্রপাতের ঘটনা ঘটছে। ফলে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। কাজেই, বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে প্রয়োজন কিছু কৌশল ও সতর্কতা অবলম্বন করা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে-

* বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যান। এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।

* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে থাকাকালীন পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।

* বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

* প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।

* বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুদের বিরত রাখুন। শিশুদের ঘরের ভেতরে রাখুন।

* খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি অবস্থান করবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক।

* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, সমুদ্রে বা নদীতে বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকুন।

* যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থানকালীন গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না।

* বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। বাড়তি সতর্কতা ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সুরক্ষার জন্য এসব ডিভাইস বৈদ্যুতিক লাইন বা সকেট থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখুন।

* বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।

বজ্রপাতে আহত হলে করণীয়

বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো একই ভাবে চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হোন। বজ্রাহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

 

তথ্যসূত্র- ন্যাশনওয়াইড, ওয়েদার ডট গভ ও উইকিপিডিয়া

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৫৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।