• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেই করুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

নিজেই করুন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ডায়াবেটিস এক মহা আতঙ্কের নাম। এই রোগ সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সব বয়সের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এই রোগ থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। মারাত্মক এই রোগ থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিত জীবনাচার। তবে খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমাদের আজকের আয়োজন ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক টোটকা’।

আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিনা তা আগে নিশ্চিত হতে হবে। আর এটা আপনি নিজেই চিহ্নিত করতে পারবেন। কয়েকটি লক্ষণ খেয়াল করলেই আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন কিনা।

লক্ষণ সমূহ : ক্লান্তি অনুভব করা, দ্রুত ওজন হ্রাস, বেশি বেশি পিপাসা অনুভব করা, ঘন ঘন প্রসাবের প্রবণতা, শরীরে কেটে যাওয়া অংশ বা ক্ষতস্থান শুকাতে দেরি হওয়া এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ডায়াবেটিস কোনো হুমকি নয়। এছাড়া প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

যে অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি

নিয়মিত শরীরচর্চা : চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরে সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেল ইনসুলিন তৈরি ব্যাহত হয়। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না। কিন্তু নিয়মিত শরীরচর্চা করলে দেহের ইনসুলিন তৈরির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

মেডিটেশন : মানসিকভাবে চিন্তিত ও দুর্দশাগ্রস্থদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি। যারা হতাশাপ্রবণ, তারা দ্রুত এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করতে মেডিটেশনের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে একাগ্র চিত্তে ইবাদত-বন্দেগী অথবা প্রার্থনাও ব্যাপক উপকারে আসতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম : চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুমের মাধ্যমে মানসিক স্থিরতা ও প্রশান্তি বজায় থাকে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

যে খাবারে মিলবে মুক্তি 

টাটকা ফল ও শাক-সবজি : সুশৃঙ্খল অভ্যাসের পাশাপাশি পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন টাটকা ফলমূল ও শাক-সবজি খেতে হবে। টাটকা ফল ও শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশ থাকে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।

পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান করা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম একটি উপায় হলো পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান করা। কারণ পানি পরিপাকে সহযোগিতা করে। খাবার ভালো মতো হজম করার জন্য পানির বিকল্প নেই। আর হজমশক্তি স্বাভাবিক থাকলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। পানি আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। যা সর্বোপরি আমাদের ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

খাবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করুন ডায়াবেটিস 

মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে খাবার খান। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। সর ছাড়া দুধ পান করুন। নিয়মিত ডিম, পরিমাণ মতো ডাল ও দিনে দুইবার আপেলের রস খেতে পারেন। এছাড়া কয়েকটি খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

দেখে নিন খাবারগুলো

জাম : দেশী এই ফলটির জাদুকরি ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। জামের রস শরীরের শর্করা শ্বেতসারে রূপান্তরিত করে। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক কার্যকর। আমাদের মনে রাখতে হবে, শর্করা ডায়াবেটিস বৃদ্ধি কাজ করে।

আমপাতা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমপাতার ব্যবহার সর্বজন স্বীকৃতি। উন্নত দেশের মানুষেরাও আমপাতা সিদ্ধ করে তার রস পান করেন। আপনারাও এই টোটকা অনুসরণ করে দেখতে পারেন। আশাকরি, ভালো ফল পাবেন। প্রতিদিন রাতে ২/৩টি আমপাতা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে পানিভর্তি পাত্রেই রেখে দিবেন। সকালে আমপাতা ফেলে পানি পান করুন।

রসুন : চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, রসুন ভেষজ গুণসমৃদ্ধ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যালিসিন। যা শরীরে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেড বাড়তে দেয় না।

করলা : রক্তের গ্লুকোজ কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে এই সবজি। করলার তিক্ত রস শরীরে ইনসুলিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দুই থেকে তিনটা করলার বীজ ফেলে দিয়ে রস করে নিন। করলার এই রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।

দারচিনি : যাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, তারা দারচিনি ব্যবহার করে ভালো ফল পেতে পারেন। মশলা জাতীয় এই উপাদানটি শরীরের অগ্নাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। এতে শরীরে সুগারের মাত্রা কমে যায়। দারচিনি গুড়া করে গরম পানিতে মিশিয়ে চা হিসেবে পান করতে পারেন। এটি অন্যান্য পানীয়ের সঙ্গেও মিশিয়ে পান করা যায়।

অ্যালোভেরা : গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালোভেরাতে ফাইটোস্ট্যারলসের অ্যান্টিহাইপার গাইসেমিক প্রভাব আছে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হলুদ, তেজপাতা ও অ্যালোভেরা জেল পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুবার পান করুন।

মেথি : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রাকৃতিক উপায় হলো মেথি গুড়া ব্যবহার। রাতে দুই চামচ মেথি গুড়া পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি বীজসহ সেই পানি পান করুন। মেথি শরীরের ইনসুলিন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত রাখে।

পরামর্শ : উপরোক্ত প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপায়ে যদি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে অবশ্যই নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

আমরাই/এসএন

১৪ জুলাই ২০২১, ০৫:৪৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।