• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘হলুদ শুধু মশলা নয়, রোগ নিরাময়ের মহৌষধ’

‘হলুদ শুধু মশলা নয়, রোগ নিরাময়ের মহৌষধ’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

হলুদ মশলা জাতীয় একটি উদ্ভিদ। রান্নায় হলুদের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। রান্নার পাশাপাশি রূপচর্চা ও ভেষজ চিকিৎসায় হলুদের ব্যবহার হয়ে থাকে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর নানা উপাদানে ভরপুর হলুদ।

এবারের পর্বে আপনাদের জন্য হলুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো-

পরিচয়

এটি হলুদ বা হলদি নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Curcuma longa। হলুদ গাছের এক ধরণের শিকড়। বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি রান্নার কাজে মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি আদার মতো গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। হলুদের আদি উৎস দক্ষিণ এশিয়া।

পুষ্টি উপাদান

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কৃষি বিভাগের ন্যাশনাল ডাটাবেজের তথ্য বলছে, হলুদে রয়েছে ক্যালরি, প্রোটিন, শর্করা, আঁশ, সুগার, আয়রন, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ।

প্রতি ১০০ গ্রাম হলুদে রয়েছে-
ক্যালরি ২৯ কিলোক্যালরি
প্রোটিন ০.৯১ গ্রাম
চর্বি ০.৩১ গ্রাম
শর্করা ৬.৩১ গ্রাম
আঁশ ২.১ গ্রাম এবং
সুগার ০.৩ গ্রাম
এছাড়া ১০০ গ্রাম হলুদে খনিজ উপাদানের মধ্যে রয়েছে
ম্যাঙ্গানিজ ২৬ শতাংশ
আয়রন ১৬ শতাংশ
পটাশিয়াম ৫ শতাংশ এবং
ভিটামিন সি ৩ শতাংশ।

হলুদের উপকারিতা

হলুদে অন্তত ৪২ রকমের উপকার রয়েছে। উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। হলুদের উল্লেখযোগ্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-

ওজন কমায় : স্থুলতার জন্য দায়ী টিস্যূগুলোর বৃদ্ধি রোধ করে হলুদ। ফলে ওজন কমতে শুরু করে। এছাড়া হলুদ মেটাবলিজম বাড়ায়, যা ওজন কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি।

হজমশক্তি বাড়ায় : পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিকজাতীয় উপাদান বেড়ে গিয়ে শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করে। কিন্তু নিয়মিত হলুদ খেলে পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা : ত্বকের বলিরেখা, বয়সের ছাপ দূর করতে হলুদ খুবই কার্যকরি। এছাড়া মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করতেও হলুদ উপকারি। মাথার খুশকি নিরাময়ে কাঁচা হলুদ অত্যন্ত কার্যকরি।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশম : হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি আর্থ্রারাইটিস থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে।

যকৃৎ সুরক্ষিত রাখে : এতে রয়েছে এমন এক প্রতিষেধক, যা লিভারের বহুবৃদ্ধি, হেপাটাইটিস, সিরোসিস ও গ্লাডারের মতো সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তকণিকা নিরাপদ রাখে। ফলে স্তন, পাকস্থলী, কোলন ও ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে : রক্তকোষ ও কোলেস্টেরলবাহী তন্তুকে স্বাভাবিক রাখে হলুদ। এটি রক্তনালীকে উন্মুক্ত করে ও রক্ত চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে ও হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।

মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করে : হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পার্কিনসনস, আলঝেইমার, টিস্যুর স্থবিরতার মতো অসুস্থতা রোধে সক্ষম। এটি আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণ বাড়ায়।

শ্বাসক্রিয়াকে শক্তিশালী করে : শ্বাসক্রিয়া শক্তিশালী করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে কারকিউমিন। আর এই উপাদানটি রয়েছে হলুদে। এছাড়া হলুদ অ্যালার্জি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি ও ঠান্ডা নিরাময়ে ব্যবহার হয়।

মাসিক নিয়মিত করে : যাদের মাসিক অনিয়মিত, তারা হলুদ খেতে পারেন। কারণ এটি মাসিক নিয়মিতকরণে বিশেষভাবে কার্যকরি।

শিশুদের লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমায় : হলুদে থাকা উপাদান শিশুদের লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে খুবই কার্যকর।

এছাড়া বাত, ফোলানো বাত নিরাময়সহ অন্যান্য ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার নিরাময়, টিউমার নিরাময় ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হলুদ খুবই কার্যকরি।

তথ্যসূত্র : এআইএস ডট গভ ডট বিডি, হেলথলাইন ডট কম, মেডিকেলনিউজ টুডে ডট কম ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২০ আগস্ট ২০২১, ০৭:৫০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।