• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলা

ফিচার ডেস্ক

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উদারতা, এসব মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। শান্তির স্বপক্ষে কাজ করা এবং আফ্রিকার নবজাগরণে ভূমিকা রাখার জন্য গত চার দশকে তিনি ২৫০টিরও অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।

১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন কেপ প্রদেশের থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় উমতাতার নিকটবর্তী ম্ভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৩৩ সালে রাজদরবারের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ম্যান্ডেলা এঙ্গকোবোর ক্লার্কবারি মেথডিস্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন। সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন।

১৯৩৭ সালে ম্যান্ডেলা ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন। জাস্টিসসহ থেম্বু রাজপরিবারের অধিকাংশ সদস্য এখানেই পড়াশোনা করত।

১৯৪১ সালের এপ্রিলে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গে পৌঁছান। সেখানে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। একই সঙ্গে তিনি কাজ করেন আইনজীবী হিসেবেও।

১৯৪৩ সালে আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসে এবং পরের বছর ইয়ুথ লীগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯৪৪ সালের অক্টোবরে ম্যান্ডেলা বিবাহিত জীবন শুরু করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসির ট্রান্সভাল প্রদেশ শাখার নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত হন এবং আঞ্চলিক সভাপতি সি. এস. রামোহানোর অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর জাতীয় নির্বাহী হিসেবে জুমার স্থলাভিষিক্ত হন,[৭৮] এবং একই বছর এএনসির যুব লীগের জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।[

১৯৫১ সালে এএনসির জাতীয় সম্মেলনে তিনি জাতিগত সম্মিলিত দল গঠনের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করেন, তবুও সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ম্যান্ডেলা এইচ.এম. ব্যাজনার ল ফার্মে কাজ শুরু করেন, যার মালিক ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। কাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ও রাজনৈতিক কার্যাবলির কারণে তিনি তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারতেন না।

১৯৬২ সালে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দীর্ঘ ২৭ বছর কুখ্যাত রবেন দ্বীপের কারাগারে বন্দি থাকতে হয় ম্যান্ডেলাকে।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুলাই জোহানেসবার্গের কাছের রিভোনিয়ার লিলেসলিফ ফার্ম থেকে আবার গ্রেপ্তার হয় মেন্ডেলা। 'রিভোনিয়ার মামলা' নামে খ্যাত এই মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসি-র সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্বদানের অভিযোগ আনা হয় ও শাস্তি দেয়া হয়।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তাকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান।

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি বোথা পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিল, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে। ম্যান্ডেলা এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।

১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হন ম্যান্ডেলা। এর পথ ধরেই ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। মুক্তির আগে পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এখানেই বন্দি ছিলেন।

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি বোথা হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার কারামুক্তির ঘটনাটি সারা বিশ্বে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত কারামুক্তির পর ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৯৩ সালে এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি।

১৯৯৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী ইভলিন মেসকে বিয়ে করেন।

১৯৯৪ এই সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। একই বছর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৪ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন তিনি।

২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

 

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, ইত্তেফাক

এবি/এসজে

 

 

 

১৫ আগস্ট ২০২১, ১২:০২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।