• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া

আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে থ্যালাসেমিয়া

ফিচার ডেস্ক

থ্যালাসেমিয়া একটি ভয়ানক বংশগত রক্তের রোগ। প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। যা ভাবিয়ে তুলেছে চিকিৎসকদের।

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। আর থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু জন্ম নিচ্ছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামি পঞ্চাশ বছরে থ্যালাসেমিয়ার রোগী দ্বিগুন হয়ে যাবে।

থ্যালাসেমিয়া কি?

এটি এক ধরনের বংশগত রক্তরোগ। যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়।  থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মারাত্মক কমে যায়। ফলে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। সময় মত সঠিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। যদি বাবা-মা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, সেক্ষেত্রে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

প্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই প্রকার। আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলফা থ্যালাসেমিয়া তীব্র হয় না। অনেক সময় রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। তবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীই বিটা থ্যালাসেমিয়ায় ভুগে থাকে। এই থ্যালাসেমিয়া আবার দুই রকম হতে পারে। যারা বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনরে আক্রান্ত, তাদেরকে থ্যালাসেমিয়ার ক্যারিয়ার বা বাহক বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের শরীরে থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেকে অজান্তেই সারা জীবন এই রোগ বহন করে চলেন। অপরটি হলো থ্যালাসেমিয়া মেজর। বাবা-মা উভয়ই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতকরা ২৫ ভাগ। বাহক হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতকরা ৫০ ভাগ।

এবার জানা যাক এর উপসর্গগুলো কি?

সাধারনত শিশু জন্মের ১-২ বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগ ধরা পড়ে। ক্লান্তি, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাশে ত্বক ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। রক্ত অধিক হারে ভেঙে যায় বলে জন্ডিস হয়ে ত্বক হলুদ হয়ে যায়। প্রস্রাবও হলুদ হতে পারে। প্লীহা, যকৃৎও বড় হয়ে যেতে পারে। অস্থির ঘনত্ব কমে যেতে পারে। নাকের হাড় দেবে যায়, মুখের গড়নে পরিবর্তন আসে। শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। দিনে দিনে জটিলতা বাড়তে থাকে।  থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো সহজলভ্য স্থায়ী চিকিৎসা বা টিকা নেই। এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ।

কিন্তু এতেও দেখা দেয় নানা প্রতিক্রিয়া। রোগীকে ঘনঘন রক্ত দিতে হয় বলে শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এই আয়রন জমা হয় হৃৎপিণ্ডে, যকৃতে, অগ্ন্যাশয়ে। এই পর্যায়টি মারাত্মক। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা না পেলে রোগী মারা যেতে পারে। এছাড়া বারবার রক্ত পরিসঞ্চালনের কারণে রোগীরা সহজেই রক্তবাহিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা

রক্ত পরিসঞ্চালনই থ্যালাসেমিয়ার মূল চিকিৎসা। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকেন। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগী রক্ত শূন্যতায় মারা যান। শরীরে আয়রন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আয়রন চিলেশনের ওষুধ দিয়ে তা কমাতে হয়। প্লীহা বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে তা কেটে ফেলতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কমে আসে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক জটিল এবং খরচ সাপেক্ষ। তাই এ রোগ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধ।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক হন, তখনই সন্তানদের এ রোগ হতে পারে। কিন্তু দুজনের একজন যদি বাহক হন এবং অন্যজন সুস্থ হন; তাহলে কখনও এ রোগ হবে না। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, সবারই জানা দরকার। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামে একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না, নির্ণয় করা যায়।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. আবদুর রহিম বলেন, এ দুর্যোগময় সময়েও থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অব্যাহতভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে ৩ হাজার ২০৫ জন নিবন্ধিত রোগী নিয়মিত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন।

তিনি আরও জানান, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা খুব জরুরি। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে এড়াতে পারলে থ্যালাসেমিয়ার হার কমানো সম্ভব। আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান গর্ভে আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ উপায়ে গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, আগামী ৫০ বছরে থ্যালাসেমিয়া পৃথিবীজুড়ে একটি বড় রকমের সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। তাই এটি রোধে ব্যাপক সচেতনতা দরকার।

 

টাইমস/এসজে

১৪ জুলাই ২০২১, ০১:০১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।