• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালীন রোগ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

শীতকালীন রোগ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

প্রতিকী ছবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক

শীত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শীতকালীন রোগের প্রাদুর্ভাব। বিশেষ করে শীতকালে চর্মরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। কারণ, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় ত্বক খসখসে হয়ে যায়। এ ছাড়া শীতের ভয়ে মানুষ এই সময়টাতে পানি পান কমিয়ে দেন। আর এ কারণেই ত্বকের বিবর্ণতা বেড়ে যায়। শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেও চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে এক বিছানায় চাপাচাপি করে ঘুমানো ও অপরিস্কার পোষাক পরিধান করার কারণে চর্মরোগ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে থাকে। শিশু, বয়স্কসহ সব ধরণের মানুষ শীতকালীন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজারে প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে শীতকালীন চর্মরোগ ও এর সংক্রমণের নানা কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা এই পর্বে সেসব নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্তারিত।

চর্মরোগ কি?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়। কেরাটিন (কবৎধঃরহ) নামক এক ধরণের আমিষ আমাদের ত্বক, চুল এবং নখের গঠন ও সুস্থতায় সহায়তা করে। ছত্রাক এই কেরাটিন ধ্বংস করে ত্বকের ক্ষতি করে।

বিশেষ করে দাদ বা জরহমড়িৎস জাতীয় সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে মানুষে ছড়ায়। ব্যবহৃত বিছানার চাদর, তোয়ালে, চিরুনী এছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্য কেউ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।

 

পাঁচড়া, দাদ ও খুজলির লক্ষণ

পাঁচড়া জাতীয় চর্মরোগের লক্ষণ হলো আঙ্গুলের মাঝখানে, কব্জিতে, কোমরে, যৌনাঙ্গের আশপাশে এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা যায়। আক্রান্ত স্থানে সবসময় চুলকানির ভাব অনুভূতি হয়, না চুলকিয়ে থাকা যায় না। ফুসকুড়িগুলোতে পুঁজ/পানি জমে আবার চুলকালে পুঁজ ছড়িয়ে পড়ে ও চুলকানি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়।

প্রতিকার

অপরিস্কার কাপড় পরিধান ত্যাগ করতে হবে। পরিষ্কার পরিছন্ন পোশাক ব্যবহার করলে খোসপাঁচড়া হবে না। নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসলের সময় পানি গরম করে নিন। গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলেও উপকার পাওয়া যায়।

সর্দি-কাশি-জ্বর

সর্দি-কাশি-জ্বর বা কমন কোল্ড শীতের সময়কার একটি সাধারণ রোগ। সর্দিজ্বর দেহের শ্বাসনালির ভাইরাসজনিত এক ধরনের সংক্রমণ। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেশি দেখা যায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যাদের কম তাদের এ রোগ বেশি হয়। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এসব রোগ একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়।

প্রতিকার

♦ স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করতে হবে।

♦ রোগীর ব্যবহৃত রুমাল বা গামছা অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখুন। যেখানে সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেষ্মা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

♦ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদের সঙ্গে, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশায় সতর্কতা অবলম্বন করুন।

♦ হাঁচি দেওয়ার সময় বা নাকের পানি মুছতে রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন।

♦ প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরুন। বিশেষ করে তীব্র শীতের সময় কান ঢাকা টুপি ও মাফলার ব্যবহার করুন।

♦ মাঝেমধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন বা হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

♦ তাজা, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যা দেহকে সতেজ রাখবে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

নিউমোনিয়া

এটি একটি মারাত্মক অসুখ। নিউমোনিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভুগে থাকে। পৃথিবীব্যাপী পাঁচ বছরের নিচের শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। শীতকালে এই রোগের প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি।

নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে যা করবেন

♦ শিশু ও বয়স্কদের জন্য শীত উপযোগী হালকা ও নরম গরম কাপড় পরান।

♦ সব সময় শিশুর সঠিক যত্ন নিন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, বিশেষ করে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

♦ শিশুকে সহনীয় গরম পানিতে গোসল করান।

♦ বেশি মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। অসুস্থ লোক, বিশেষ করে হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত লোকের সামনে শিশুদের নেবেন না।

♦ সুস্থ শিশুকে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর কাছে যেতে নেবেন না।

♦ শিশুর সামনে বড়দের হাঁচি-কাশি না দেওয়া বা মুখে রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করার অভ্যাস করান।

♦ সব সময় নাক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।

♦ চুলার ধোঁয়া, মশার কয়েল ও সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন।

♦ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ গ্রহণ করুন।

অ্যাজমা

শীতকালে হাঁপানি বা অ্যাজমাজাতীয় শ্বাসকষ্ট সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। অ্যাজমা একবার হলে এর ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয় সারা জীবন। তবে আপনি চাইলে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে যা করবেন

♦ অ্যাজমার রোগীরা শীতে পর্যাপ্ত গরম জামা-কাপড় পরুন। কোনো অবস্থাতেই দেহে শীত লাগাবেন না।

♦ ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে শোবারঘরটি উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন।

♦ শীতের আগেই চিকিৎসককে দেখিয়ে ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন।

অন্যান্য চর্মরোগ হলে করনীয়

♦ অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে আলাদা আস্তর তৈরি করে। ফলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

♦ খুশকি দূর করতে অন্য সময়ের চেয়ে শীতে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চুল শ্যাম্পু করুন।

♦ হাত ও পায়ের তালু এবং ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাতে দিন। ত্বকের সুরক্ষায় ময়েশ্চারাইজার, কালো জিরা তেল, অলিভ অয়েল ও সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।

♦ বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না বা কড়া আগুনে তাপ পোহাবেন না। এতে চামড়ায় সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বাতব্যথা

শীতে আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। মূলত বয়স্করা এই সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াসিটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের সময় চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়।

বাতব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

♦ যথাসম্ভব শরীর গরম রাখুন।

♦ সব সময় হাত-পায়ে মোজা পরিধান করুন।

♦ ব্যয়াম ও খাদ্যাভাসের মাধ্যমে দেহের অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমিয়ে আনুন।

♦ একটানা অনেকক্ষণ বসে না থেকে হালকা ব্যায়াম ও হাটাচলা অব্যাহত রাখুন।

পরামর্শ: শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হলে নিজেই নিজের যত্ন নিতে উপরের টিপসগুলো মেনে চলতে পারেন। তবে যদি কারো অ্যাজমা, আর্থ্রাইটিস, শ^াসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও চর্মরোগ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়, তাহলে দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে উপরোক্ত টিপসগুলো মেনে চলার আগে আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে টিপসগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজার।

১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৫৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।