• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে বয়স্কদের বাড়তি যত্ন কেন কীভাবে?

শীতে বয়স্কদের বাড়তি যত্ন কেন কীভাবে?

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কমতে শুরু করেছে। পরিবেশ দিনদিন আরও সুষ্ক হয়ে উঠছে। ডিসেম্বরের প্রথম দশকের পর থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। এমন হিমশীতল আবহাওয়ায় শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে চিন্তার যেন শেষ নেই। শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মানবদেহের স্বাভাবিক পিএইচ, তাপমাত্রা, হরমোন, এনজাইমের কার্যক্রমকে নষ্ট করে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে শীত। শীতকালে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাধিক জনপ্রিয় ওয়েব জার্নাল শীতকালে বয়স্কদের বাড়তি সুরক্ষার টিপস দিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। আমরা নিবন্ধগুলোর একটি সংকলিত রুপ পরামর্শ বা টিপস আকারে আপনাদের জন্য তুলে ধরেছি।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক বিস্তারিত।

বয়স্কদের প্রাথমিক যত্ন

পোশাক নির্বাচন: বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের শীতের পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি পাতলা আরামদায়ক কাপড় নির্বাচন করুন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা আরামও পাবে, আবার কাপড় পাতলা হওয়ায় সহজে পরতেও পারবে। চাদর, মাফলার, সোয়েটার বয়স্কদের জন্য উত্তম শীতের পোশাক। তবে সোয়েটারের ভেতরে আগে একটা সূতি কাপড়ের গেঞ্জি পরাতে পারেন।

ত্বকের যত্ন নিন: বয়স্ক সদস্যরা অনেক সময় অবহেলার শিকার হন। শিশুদের মতো শীতকালে বয়স্কদের ত্বকের যত্ন নিতে হবে। এজন্য ময়েশ্চারাইজার সম্বলিত প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন।

শাকসবজি খেতে দিন: শীতে প্রবীণদের সুস্থ রাখতে তাজা শাক-সবজি বেশি করে খেতে দিন। শীতকালীন গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালংশাক, পেঁপেঁসহ অন্যান্য সবজি ভিটামিন ও মিনারেলে পূর্ণ। এসব খাবার বয়স্কদের সুস্থ্যতা নিশ্চিত করে।

ঠাণ্ডা পানি পরিহার করুন: বাড়ির বয়স্ক সদস্যের খাবার পানি কুসুম গরম করে দিন। গোসল ও ওযুর পানিও প্রয়োজনে হালকা গরম করে দিন। বারবার পানি গরম করা কষ্টসাধ্য হলে প্রয়োজনে বড় সাইজের ফ্লাক্স কিনে নিতে পারেন। মনে রাখবেন, আজকের প্রবীণ সদস্যই একদিন আপনাকে আদরে আদরে বড় করেছেন। কাজেই বয়স্কদের যত্ন নিলে আপনিও বয়স্ক হওয়ার পর তার প্রতিদান পেতেই পারেন।

হালকা ব্যায়াম: শীতে বয়স্কদের শরীর সক্রিয় রাখার চেষ্টা করুন। সারাদিন শুধু শুয়ে-বসে না থেকে প্রবীণ মানুষটিকে ঘরের ভেতর হালকা ব্যায়াম করতে বলুন। ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটিসহ হাত-পা নাড়াচড়া করতে বলুন।

ঘরে আলোর ব্যবস্থা রাখুন: যে ঘরে প্রবীণ ব্যক্তি বসবাস করেন, সেই ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন। যতটা সম্ভব ঘর গরম রাখুন। এতে শীত কম লাগবে, আরাম অনুভব হবে।

পর্যাপ্ত ঘুমাতে দেন: বয়স্কদের প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া ঠান্ডা-কাশি থেকে দূরে রাখতেও ঘুমের বিকল্প নেই। তাই তাঁদের পর্যাপ্ত ঘুমাতে বলুন। এ ছাড়া বয়স্কদের মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান করা থেকে বিরত রাখুন।

পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলুন: শীতে পানির চাহিদা কম থাকায় বয়স্করা পানি কম খান। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করে। তাই শীতে বয়স্কদের প্রয়োজনীয় পানিসহ কেমিক্যালমুক্ত বিভিন্ন দেশি ফলের রস খেতে বলুন।

বয়স্কদের সঙ্গ দিন: বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা একটা সময় এসে একাকিত্বে ভোগেন। এতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তাই, বয়স্ক সদস্যকে প্রতিদিন অল্প অল্প করে সময় দেন। পরিবারের সবাই বয়স্ক সদস্যটিকে অল্প অল্প সময় দিলে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

শীতে বয়স্কদের অসুখবিসুখ

বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অল্প ঠাণ্ডায়ও তাঁদের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। শীতের এই সময়ে তাঁরা ভোগেন নানা অসুখবিসুখে। সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এবং শীত থেকে রক্ষা করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় না।

জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শীতকালে বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন-

শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা: বয়স্ক মানুষের কমন সমস্যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা বা শ্বাসনালির প্রদাহ, যা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাড়তে পারে। এ ছাড়া শীতের সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া কিংবা অ্যাজমা। অনেক সময় এতে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এ ছাড়া যাঁদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টজাতীয় সমস্যা বেশি, তাঁদের উচিত গরম কাপড় পরিধান করা। সেই সঙ্গে গরম পানি পান ও ব্যবহার করা। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলে, তায়াম্মুম করে নামাজ পড়া উচিত।

ব্যথা বেদনা: যাঁদের আগে থেকেই রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও-আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধি বা বাতজনিত ব্যথা রয়েছে, তাদের এধরণের ব্যথা শীতকালে আরও বেড়ে যায়। তাই, শীতকালে বয়স্কদের হালকা ব্যায়াম করানোর অভ্যাস করুন। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করে রাখুন। সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অন্তত ২০ মিনিট বয়স্ক ব্যক্তিকে রোদ পোহাতে বলুন। এতে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ হবে।

হাইপোথার্মিয়া: এটি এমন একটি অবস্থা, যখন কারো তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তুলনায় কমে যায় এবং বিপাকীয় কার্যাবলি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয় না। অতিরিক্ত শীতে বয়স্কদের এ সমস্যা বেশি হয়। তখন শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়, সে স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। এ সময় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাত-পা বেশি ঠাণ্ডা হয়ে অঙ্গগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে। এ রকমটি দেখা দিলে রোগীর শরীর দ্রুত গরম করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাৎক্ষণিক গরম দুধ, চা, কফি বা স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে।

অন্যান্য টিপস-

ত্বক, ঠোঁট, হাত-পা, নখসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ক্রিমসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করুন।

চাদর, বালিশ ও বিছানার চাদর নিয়মিত পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে দিন।

♦ শোবার ঘরটির দিকে নজর দিন। বিছানা যেন শীতল না হয়ে যায়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা বা গরম রাখুন।

অজু, গোসলসহ নানা কাজেও গরম পানি ব্যবহার করতে দিন, এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

শীতের সময় রাত জাগা ক্ষতিকর। তাই দ্রুত শুয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

প্রবীণ বা বৃদ্ধদের মদ্যপান, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত রাখুন।

বয়স্কদের দিকে শীতকালে বেশি খেয়াল রাখুন। শিশুদের মতো বয়স্করাও তাদের শরীরের গতি, সুস্থতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না, কাজেই সচেতন সদস্য হিসেবে আপনাকেই আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্যটির দিকে নজর রাখতে হবে। বয়স্কদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

তথ্যসূত্র: ডক্টরস এনডিটিভি, সিনিওরিটি ও হেলথ লাইন।

০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:১৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।