• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লেবুর খোসার জাদুকরি গুণাগুণ

লেবুর খোসার জাদুকরি গুণাগুণ

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

লেবু অত্যন্ত উপকারি একটি ফল। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু রূপচর্চায়ও ব্যবহার করা হয়। লেবুর রস, খোসা কিংবা পাতা, সব অংশই যেন গুণে মানে অনন্য। শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম; রান্নাঘরে লেবু না থাকলে যেন চলেই না। শরীর ফিট রাখতে অনেকেই লেবু খেয়ে থাকেন। বর্ষাকালে সাধারণ জ্বর-সর্দির সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে লেবুর জুড়ি মেলা ভার। টক মিষ্টি স্বাদের লেবুর ওষধি গুণাগুণও ব্যাপক।

প্রিয় পাঠক, লেবুর পুষ্টিগুণ আমাদের সবারই প্রায় জানা। তাই, এই পর্বে আমরা লেবুর খোসার গুণাগুণ ও উপকারিতা নিয়ে তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নিই কি আছে লেবুর খোসায়-

কি আছে লেবুর খোসায়

বিশেষজ্ঞদের বরাতে মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইনে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, লেবুর খোসায় রয়েছে নিউট্রিয়েন্টস, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। এ ছাড়াও লেবুর খোসার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন লেবুর খোসা

স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেবুর খোসা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই, প্রথমে একটি লেবুকে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। পুরো ঠাণ্ডা হয়ে জমে গেলে একটি গ্রেটার দিয়ে লেবুর খোসা সমেত গ্রেট করুন।

রান্না করা গরম গরম সুপ, মাছের ঝোল বা নুডলসের ওপরে ছড়িয়ে লেবুর খোসা খাওয়া যায়। পানির ওপরে এই গোটা লেবুর খোসার কুচি ছড়িয়ে দিয়ে খেতে পারেন।

উপকারিতা

→ লেবুর খোসায় লেবুর রসের চেয়ে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন থাকে। নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে সাধারণ সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমে।

→ লেবুর খোসায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন দূর করে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ে।

→ নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এতে আছে সয়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ ও লিমোনেন্স, যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের প্রকোপ কমায়।

→ লেবুর খোসা মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। এতে থাকা নিউট্রিয়েন্টস মুখের অভ্যন্তরীণ ফাংসনে প্রভাব বিস্তার করে। নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে মুখের রুচি বৃদ্ধি হয়।

→ যারা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর খোসা মিশিয়ে পান করতে পারেন। এই পানীয় অ্যাসিডিটি দূর করতে সহায়তা করে।

→ লেবুর খোসা ত্বকের বলিরেখা, ব্রণ ও মলীনতা দূর করে। নিয়মিত লেবুর খোসা দুধ ও মুধর সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উন্নত হয়। এতে মুখের অবাঞ্ছিত দাগ দূর হয়।

→ লেবুর খোসায় রয়েছে ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের মত খনিজ উপাদান। এতে আরও আছে ফাইবার ও ভিটামিনস। এসব উপাদান ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

→ লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি দেহের অতিরিক্ত মেদ-চর্বি ধ্বংস করে। ফলে এই খোসা খেলে দেহের বাড়তি ওজন কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান, তারা নিয়মিত লেবুর খোসা খেতে পারেন হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে।

→ লেবুর খোসায় থাকা সি, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দাঁত ও হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারি। লেবুর খোসা দাঁতের বিভিন্ন অসুখ থেকে রক্ষা করে। পলি আর্থারাইটিস, অস্টিওপরোসিস-সহ হাড়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে লেবুর খোসা।

→ দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে লেবুর খোসা সবার সেরা। এটি নিয়মিত পরিমাণ মত খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই উপাদানটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

রূপচর্চায় লেবুর খোসা

⇒ সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বকের সুরক্ষায় লেবুর খোসার জুড়ি মেলা ভার। সূর্যের আলো মুখের ত্বক পুড়িয়ে দেয়। কিন্তু নিয়মিত লেবুর খোসা মুখে লাগালে ত্বকের পোঁড়া ভাব দূর হয়।

⇒ বিউটিশিয়ানদের মতে, লেবুর খোসা গুঁড়ো করে তার সঙ্গে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা যেতে পারে বিশেষ ফেসপ্যাক। এটি মুখে ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এবং ফাইবারসহ একাধিক উপকারী উপাদান।

⇒ লেবুর খোসার গুঁড়ো ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। সেই সঙ্গে মুখের কালো ছোপ ছোপ দাগ দূর হয় সহজেই। শুধু তাই নয়, ত্বককে নরম করে তুলতেও লেবুর খোসার বিকল্প নেই।

যেভাবে তৈরি করবেন লেবুর খোসার ফেসপ্যাক

এক চামচ করে পাতি লেবুর খোসার গুঁড়ো, চন্দন গুঁড়ো এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি সারা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে নিন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এই ফেসপ্যাক সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ব্যবহার করুন।

ত্বকের বলিরেখা দূর করতে লেবুর খোসা ও টকদইয়ের ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে লেবুর খোসার গুঁড়ো ও ১-২ চামচ টকদই মিশিয়ে নিন। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কালচে ছোপ দাগ দূর করতে ব্যবহার করুন পাতি লেবুর খোসার গুঁড়ো, দুধ ও বেসনের ফেসপ্যাক। সবগুলো উপকরণ মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে জমে থাকা মৃত কোষ দূর হবে। এই ফৈসপ্যাক ব্যবহারে ত্বকের বলিরেখাও দূর হয়। সপ্তাহে অন্তত ৩ বার এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।

এ ছাড়াও লেবুর খোসার গুঁড়ো ত্বকে ফেস ওয়াশের মতো ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের ময়লা দূর হবে সহজেই।

 

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ও হেলথ বেনিফিট টাইমস।

২৬ জুলাই ২০২২, ০৭:১৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।