• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে পরে করণীয়

কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে পরে করণীয়

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আজহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পশু কোরবানি করা। সাধ্য অনুযায়ী সামর্থবান মুসলাম পশু কোরবানি করে থাকেন। তবে কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে ও পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

প্রিয় পাঠক, পশু কোরবানির আগে ও পরে কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তা এই পর্বে তুলে ধরা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক-

কোরবানির পশু ক্রয়ের আগে আগে করণীয়

কোরবানির জন্য পশু ক্রয়ের আগে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সুস্থ সবল পশু বাছাইয়ের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। সুস্থ সবল পশু চিনতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হবে। তাহল-

⇒ পশুর দেহে ক্ষত চিহ্ন বা দাগ থাকলে
⇒ শিং ভাঙা এবং তা থেকে রক্ত বের হওয়া অথবা ঘাঁ থাকলে,
⇒ পশুটি রোগাক্রান্ত হলে,
⇒ পশুর পা বা দেহের কোনো হাঁড় ভাঙা থাকলে কোরবানির জন্য এধরণের পশু কেনা থেকে বিরত থাকুন।

পশু জবাইয়ের আগে করণীয়

পানি পান করানো

পশু জবাইয়ের ঘণ্টাখানিক আগে পর্যাপ্ত পানি পান করানো প্রয়োজন। এতে পশুর চামড়া ছাড়ানো সহজ হয়। এ ছাড়া কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে পানি করানোর মাঝে সওয়াবও রয়েছে।

জবাইয়ের স্থান নির্বাচন

পশু জবাইয়ের জন্য উচু জায়গা বাছাই করুন। শুকনো, উচু ও আলো-বাতাস আছে, এমন জায়গায় পশু জবাই করুন। এখন বর্ষাকাল, তাই উচু জায়গায় পশু জবাই করাই উত্তম। এতে হঠাৎ বৃষ্টি নামলেও কাঁদাপানির বিড়ম্বনা থেকে রেহায় পাওয়া যাবে।

ধারালো অস্ত্র ব্যবহার

পশু জবাইয়ের জন্য ধারালো অস্ত্র ও ছুরি ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। এতে পশু জবাইয়ের সময় পশুর কষ্ট কম হয়। এ ছাড়া ছুরি ও অন্যান্য ছোট অস্ত্র ধারালো হলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।

চামড়া ছাড়ান সতর্কতার সঙ্গে

দেশের চামড়া শিল্প ও চামড়াজাত পণ্যের বাজারের চাহিদা পুরণে কোরবানির পশুর চামড়া ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কাজেই পশুর চামড়া ছাড়ানোর সময় সতর্ক থাকা উচিত। যেন চামড়া কেটে ছিঁড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। দক্ষ লোক দিয়ে পশুর চামড়া ছাড়াতে হবে।

পশু টানা হেঁচড়া করবেন না

কোরবানির জন্য শোয়ানো অবস্থায় পশুটিকে যেন টানাহেঁচড়া না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোরবানির পশু জবাই করার কাজে বড় ও চামড়া ছাড়ানোর কাজে ধারালো মাথা ছুরি ব্যবহার করতে হবে।

কোরবানির পশু পরে করণীয়

জবাইয়ের কাজ দ্রুত করুন

পশুর ধমনী যাতে পুরোপুরি কাটা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পশু জবাইয়ের পর পুরোপুরি ব্লিডিং হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাংস কাটা শুরু করা হলে মাংসের ভেতর রক্ত থেকে যায়। যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

চামড়া সংরক্ষণ করুন

চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান একটি জিনিস। এতে গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের হক রয়েছে। তাই চামড়া যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে চামড়ার ক্ষতি হয় বেশি। তাই, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে পশুর চামড়াকে রক্ষা করতে ড্রাই ট্রিটমেন্ট, সল্ট ট্রিটমেন্ট ও ফ্রিজিং করে চামড়া সংরক্ষণ করুন।

নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলুন

জবাইয়ের পর পশুর রক্ত ও তরল বর্জ্য খোলা স্থানে ফেলে না রেখে নির্ধারিত ময়লা রাখার স্থানে ফেলুন। তবে রক্ত ও তরল বর্জ্য মাটিতে পুতে ফেলা সবচেয়ে ভালো। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার ঝুঁকি একদমই কমে যায়।

কোরবানির পশু জবাই বা নহরের পদ্ধতি

জবাই করার সময় পশু ক্বিবলামুখী করে শোয়াতে হবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ বলা পরিত্যাগ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তবে তা খাওয়া বৈধ।

কোরবানি শুদ্ধ হবে যে ভাবে

জবাই করার সময় পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী, এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটা জরুরি। কমপক্ষে যদি তিনটি রগ কটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দু’টি রগ কাটা হয় তবে কুরবানি দুরস্ত হবে না। (হিদায়া)

জবাই করার সময় ছুরি ভালোভাবে ধার দিতে হবে। যাতে করে জবাইয়ের সময় পশুকে খুব বেশি কষ্ট করতে না হয়। যেমন- এক ছুরি দিয়ে জবাই শুরু করে চামড়া কিছু কাটার পর কোনো ব্যক্তি যদি জবাই করার সময় জবাইকারীর ছুরি চালানোর জন্য সাহায্য করে, তবে তাকেও ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে।

পশু জবাইয়ের দোয়া

কোরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে (উচ্চস্বরে) নিয়ত করা জরুরি নয়। অবশ্য মনে মনে নিয়ত এ নিয়ত করা যে, ‘আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি আদায় করছি।’ তবে মুখে দোয়া পড়া উত্তম।

০৯ জুলাই ২০২২, ১২:২৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।