• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপ মহাদেশের জানা-অজানা যত দিক

ইউরোপ মহাদেশের জানা-অজানা যত দিক

ফিচার ডেস্ক

ইউরোপ আকারের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। ইউরোপ মহাদেশে মোট ৫০ টি দেশ রয়েছে। তবে, এই ৫০ টি দেশের মধ্যে কেবল ৪৪ টিরই রাজধানী ইউরোপে অবস্থিত!

ইউরোপের ২৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জোটের নাম ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বা ইইউ।

ইউরোপ সীমানা উত্তরে আর্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর বিদ্যমান।

জনসংখ্যা

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী এই মহাদেশে মোট ৭৪.৮ কোটিরও বেশি লোক বসবাস করে।

বৃহত্তম দেশ

রাশিয়ার যে অংশটুকু ইউরোপের অন্তর্গত তা অন্য যে কোনও ইউরোপীয় দেশের থেকে আকারে বড়, তাই রাশিয়াকেই ইউরোপের বৃহত্তম দেশ বলা চলে। এরপর রয়েছে ইউক্রেন এবং ফ্রান্সের স্থান।

বৃহত্তম রাজধানী শহর

ইউরোপে অবস্থিত বৃহত্তম রাজধানী শহর মস্কো। রাশিয়ার রাজধানী শহরটিতে প্রায় ১.৩ কোটিরও বেশি মানুষ বাস করে।

ক্ষুদ্রতম দেশ

ভ্যাটিকান সিটি শুধুমাত্র ইউরোপের নয়, সমগ্র বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ। একে ইতালির মধ্যে অবস্থিত একটি ছিটমহলও বলে থাকেন অনেকে। এর আয়তন মাত্র ১২১ একর এবং জনসংখ্যা ৮২৫ জন।

বৃহত্তম দ্বীপ

গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য ইউরোপ মহাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ।

ক্ষুদ্রতম শহর

ক্রোয়েশিয়ার হাম কেবল ইউরোপ নয়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট শহর। এই শহরে মাত্র ৩০ জন বাসিন্দা রয়েছেন।

সর্বাধিক জনবহুল শহর

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলকে সাধারণত ইউরোপের বৃহত্তম শহর হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। তবে ইস্তাম্বুলের পূর্বাঞ্চল মূলত এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত। ইস্তাম্বুলের জনসংখ্যা প্রায় ১.৭ কোটি। তবে সম্পূর্ণ ইউরোপে অবস্থিত সর্বাধিক জনবহুল শহর মস্কো!

ঘনবসতিপূর্ণ দেশ

ইউরোপের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ মোনাকো। ভূমধ্যসাগরের সীমান্তবর্তী এই দেশটি একই সাথে বিশ্বের সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ

ইউরোপ হল সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ মহাদেশ, যার অর্থ ইউরোপ মহাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় অন্য যেকোনও মহাদেশের তুলনায় বেশি সংখ্যক লোক বাস করে।

উত্তরের শহর

নরওয়ের ন্যয়-অ্যালেসুন্ড ইউরোপের সব থেকে উত্তরে অবস্থিত শহর। সারা বছর প্রায় ৩৫ জন লোক সেখানে থাকেন। তবে গ্রীষ্মে জনসংখ্যা বেড়ে ১২০ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। শহরটি মূলত অনুসন্ধান এবং গবেষণার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

উত্তরের রাজধানী শহর

আইসল্যান্ডের রিকজাভিক ইউরোপের এবং বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত রাজধানী শহর।

বৃহত্তম ভূমি বেষ্টিত দেশ

কাজাখস্তান ইউরোপ এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভূমি বেষ্টিত বা ল্যান্ডলকড দেশ। কাজাখস্তানে ১.৮ কোটি লোক বাস করে, এটি বিশ্বের দশটি বৃহত্তম দেশের মধ্যে একটি। এই মহাদেশে সব মিলিয়ে ১৪ ভূমি বেষ্টিত দেশ রয়েছে।

সর্বোচ্চ পর্বত

রাশিয়ার মাউন্ট এলব্রাস ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত, এর উচ্চতা ১৮,৫১০ ফুট। এটি ককেশাস পর্বতমালার অংশ।

দীর্ঘতম নদী

রাশিয়ার ভলগা নদী ইউরোপের দীর্ঘতম নদী। এটি প্রায় ৩,৬৯২ কিমি দীর্ঘ।

গুরুত্বপূর্ণ জলপথ

ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক জলপথ দানিয়ুব। এই নদীটি দশটি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি ২,৮৬০ কি.মি দীর্ঘ এবং ইউরোপের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী।

বৃহত্তম বন্দর

নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরটি ইউরোপের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম কনটেইনার পোর্ট।

বৃহত্তম হ্রদ

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের নিকটে অবস্থিত লাদোগা হ্রদ ইউরোপের বৃহত্তম হ্রদ। একই সাথে এটি বিশ্বের বৃহত্তম মিঠা পানির হ্রদ।

বৃহত্তম জলপ্রপাত

সুইজারল্যান্ডের রাইন জলপ্রপাতটি ইউরোপের বৃহত্তম সমতল জলপ্রপাত। এটি ৪৯২ফুট ফুট প্রশস্ত এবং ৭৫ফুট উঁচু।

জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সমূহ

বিশ্বের শীর্ষ দশটি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি ইউরোপে অবস্থিত। শুধুমাত্র ফ্রান্সেই প্রতি বছর প্রায় ৯ কোটি পর্যটক ভ্রমণ করেন, এটি বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ইউরোপের দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে রয়েছে-

  •     টাওয়ার অফ লন্ডন
  •     আইফেল টাওয়ার
  •     নিউশওয়ানস্টাইন ক্যাসল
  •     আলহাম্ব্রা
  •     ক্রেমলিন
  •    এক্রোপোলিস
  •    ফোরো রোমানো

জনগোষ্ঠী

বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ১০% ইউরোপে বাস করে। ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রায় ৯০% স্লাভিক, রোমান এবং জার্মান এই তিনটির একটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

সূখী মানুষের দেশ

২০১৮-২০ এর ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের সব থেকে বেশি সুখী মানুষের দেশ ফিনল্যান্ডে।

ভাষা

ইউরোপের প্রধান ভাষাগুলি হচ্ছে ফরাসি, ইতালিয়ান, স্পেনিশ, জার্মানি, রাশিয়ান, পোলিশ, ইংরেজি প্রভৃতি।

ধর্ম

ইউরোপীয় জনগণের প্রায় ৭৬% খ্রিস্টান। মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসীর সংখ্যা ৬%। তাছাড়া ইউরোপের প্রায় ১৮% নাগরিক নিজেদেরকে নাস্তিক হিসাবে বিবেচনা করে।

প্রাণী

ইউরোপে বাদুড়, হরিণ এবং ওটারের মতো ২৭০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এ সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে ১৫% ইতিমধ্যে বিলুপ্ত প্রায়। এছাড়া ইউরোপে ৭৫টি উভচর প্রাণী এবং প্রায় ৮০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ

দস্তা, রূপা, তামা, লোহা আকরিক এবং কয়লা ইউরোপের প্রধান খনিজ। উত্তর ইউরোপের কয়েকটি অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের মজুদ রয়েছে। ইউরোপে প্রচলিত সাধারণ শস্য হচ্ছে গম, আলু, জলপাই, আঙ্গুর ও কমলা।

ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ৩৫,০০০ অব্দে এই মহাদেশে প্রথম মানুষের আগমণ ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। ব্রোঞ্জ যুগের মিনোয়ান সভ্যতাকে বাণিজ্য এবং প্রযুক্তিতে অগ্রগামী সভ্যতা হিসাবে হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মধ্যযুগের ইউরোপ ছিল বর্বর বা অন্ধাকার আচ্ছন্ন। মধ্যযুগের পরে, ভাইকিংস, মঙ্গোলস, হুনস, ম্যাগায়ারস, তাতারস এবং আরও অনেক জনগোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।

আধুনিক যুগে দুইটি বিশ্বযুদ্ধে বিদ্ধস্ত হওয়ার পরেও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে এই মহাদেশটি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

 

এবি/এনজে

তথ্যসূত্র: কিডস ওয়ার্লড ট্রাভেল গাইড।

 

১৮ জুলাই ২০২১, ০৯:০৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।