• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্যাটি লিভার : প্রয়োজন সচেতনতা

ফ্যাটি লিভার : প্রয়োজন সচেতনতা

ফিচার ডেস্ক

ফ্যাটি লিভার। সাম্প্রতিক সময়ে এই রোগটির নাম আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। রোগটির পরিচিতি নতুন হলেও বিশ্বব্যাপী এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও একইভাবে এর বিস্তার ঘটছে। কিন্তু কী এই ফ্যাটি লিভার? এটি লিভার বা যকৃতের অন্যতম একটি সমস্যা। সাধারণত লিভারে ৫ শতাংশ পর্যন্ত চর্বি শোষণ হতে পারে। যদি এর বেশি চর্বি জমা হয়, তখন একে ফ্যাটি লিভার বা চর্বিযুক্ত লিভার বলে। যা নীরবে-নিভৃতে লিভারকে অকেজো করে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।

বিশ্বের প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভার সমস্যায় ভুগছেন। এক সময় এটি ধনীদের রোগ মনে করা হত। কিন্তু এখন গ্রাম পর্যায়েও প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। শহরে এ হার আরও বেশি হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। যা আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এ জন্য চিকিৎসার চেয়ে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা বেশি জরুরি। আর তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।

ফ্যাটি লিভার কেন হয়

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, পশ্চিমা সমাজে চর্বি তৈরির প্রধান কারণ অ্যালকোহল হলেও আমাদের মতো দেশগুলোতে মেদ-ভুঁড়ি, ডায়াবেটিস, ডিজলিপিডেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, হাইপারটেনশন বা অতিরিক্ত রক্তচাপ আর হাইপো-থাইরয়েডিজম ফ্যাটি লিভারের মূল কারণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি।

এছাড়াও ফ্যাটি লিভারের আরেকটি বড় কারণ হল খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল। আয়েশি জীবনযাপন আর অতিরিক্ত ফ্যাট বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে লিভারে চর্বি জমে। বর্তমানে খুব জনপ্রিয় ফাস্ট-ফুডের কারনেও এ দেশে ফ্যাটি লিভারের রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধি পাচ্ছে।

লক্ষণ

প্রায়ই ফ্যাটি লিভারের তেমন লক্ষণ থাকে না। কেউ কেউ পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা, ভারভার ভাব বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা বলে থাকেন। সাধারণত রুটিন চেক আপ বা অন্য কোনো কারণে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে তখন রোগটি অনেক অগ্রসর হয়ে যায়।

চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যানসারও হতে পারে। এছাড়া ফ্যাটি লিভার রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই যাদের ফ্যাটি লিভার আছে তাদের উচিত রোগটি সম্পর্কে জানা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা। অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ফ্যাটি লিভার আক্রান্তদের চিকিৎসায় এর কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় শতভাগ কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত না হলেও বাজারে কিছু ওষুধ আছে, যা উপকারী। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

তবে ফ্যাটি লিভারের সবচাইতে কার্যকর চিকিৎসা হল লাইফষ্টাইল বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন। অতিরিক্ত শর্করা আর চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া, সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি দিন হাটা এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে আমরা আমাদের লিভারকে ফ্যাটমুক্ত রাখতে পারি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল) বলেন, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে লিভারে চর্বি জমা থেকে শুরু করে লিভার সিরোসিস; এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজন। শুরুতে ব্যবস্থা নিলে এ রোগ অধিকাংশ সময়ই নিরাময় হয়।

 

টাইমস/এসজে

 

 

১৪ জুলাই ২০২১, ১২:৪১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।