• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাউন সিনড্রোম-কেন হয়, কী করবেন

ডাউন সিনড্রোম-কেন হয়, কী করবেন

ফিচার ডেস্ক

প্রতিটি বাবা-মা চান একটি সুস্থ সবল সন্তান। কিন্তু কখনো কখনো তাদের এই চাওয়া অপূর্ণ থেকে যায়। কেননা অনেক শিশু জন্মগতভাবেই নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যার জন্য পরবর্তী জীবনে তাকে ও পরিবারকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বেশিরভাগ সময় জন্মগত এই সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান পাওয়া যায় না।

আমাদের কোষের মধ্যকার ক্রোমোজোমের ভেতরের ডিএনএকে বলা হয় বংশগতির ধারক ও বাহক। আমাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন আচার, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রং সবকিছুই এই ডিএনএর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই ডিএনএ বা ক্রোমোজোমের অসামঞ্জস্য হলে শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি দেখা দেয়। যাকে বলা হয় জেনেটিক ত্রুটি। ডাউন সিনড্রোম এমনই একটি জেনেটিক ত্রুটি।

কোনো কোনো শিশুর কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় যেমন : মাংসপেশির শিথিলতা, কম উচ্চতা, চোখের কোনা ওপরের দিকে ওঠানো, চ্যাপ্টা নাক, ছোট কান, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা, জিব বের হয়ে থাকা ইত্যাদি। এগুলো ডাউন সিনড্রোম।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৮শ শিশুর মধ্যে একটি শিশু এই ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ হাজার ডাউন শিশু জন্মায়। সে হিসাবে প্রতিদিন ১৫টি ডাউন শিশু জন্ম নেয়। দেশে প্রায় ২ লাখ শিশু এ সমস্যায় ভুগছে।

 

ডাউন সিনড্রোম কেন হয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোপেন কুমার কুণ্ড জানান,  ডাউন সিনড্রোম একটি শিশুর বংশানুগতিক সমস্যা এবং শরীরে ক্রোমোজোমের একটি বিশেষ অবস্থা। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ২১তম ক্রোমোজোমে তিনটি ক্রোমোজোম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসোমি ২১’ বলা হয়।

সাধারণত বেশি বয়সে মা হলে বিশেষ করে ৩৫ বছর বয়সের পরে সন্তান নিলে সেই সন্তানের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। অন্যদিকে, কোনো মায়ের আগে এমন বৈশিষ্ট্যের সন্তান থাকলে পরবর্তী সন্তানও এরকম ডাউন শিশু হতে পারে। পরিবেশদূষণ, তেজস্ক্রিয়তা ইত্যাদি কারণেও ডাউন শিশুর জন্ম হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অন্য শিশুর চেয়ে এই শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে বিলম্ব দেখা যায়। এদের জন্মগত হার্টের সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির সমস্যা, ঘন ঘন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদি হতে পারে।

চিকিৎসা

দুঃখের বিষয়, ডাউন সিনড্রোমের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা কিংবা প্রতিরোধের উপায় কোনোটাই নেই। জন্মের পর কোনো জটিলতা দেখা দিলে সে অনুযায়ী তার চিকিৎসা করতে হয়।  সঠিক সময়ে লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ, ল্যাঙ্গুয়েজ ও ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে ডাউন শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মতোই পড়ালেখা করে কর্মক্ষম বা স্বনির্ভর হতে পারে। অথবা প্রয়োজনীয় পরিচর্যায় শারীরিক সমস্যাগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

অধ্যাপক গোপেন কুমার কুণ্ডের মতে, ডাউন সিনড্রোম জন্মের আগেই শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা; যেহেতু মা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই এ ব্যাপারে সাবধান হওয়াই এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায়। সন্তান মায়ের পেটে আসার ১০ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়। যেমন-আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে, মায়ের রক্ত অথবা পেটের পানি নিয়ে পরীক্ষা, ভ্রুণের টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করা ইত্যাদি।

ডাউন শিশুদের প্রতি সকলের মমতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে।

 

টাইমস/এসজে

১৪ জুলাই ২০২১, ১২:২৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।