ছোট্ট টেংরা মাছে বিশাল উপকারিতা
প্রতিকী ছবি
দেশি প্রজাতির মাছের স্বাদই আলাদা। কই, শিং, মাগুর, টাকি, পুঁটি, পাবদা, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ আমাদের দেশে পাওয়া যায়। খালে-বিলে পাওয়া এসব মাছের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা কমেনি আজও। বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হলেও দেশি জাতের মাছের দাম ও চাহিদা আগের চেয়ে বেশি। বাজারে এখন প্রায় সব প্রজাতির দেশি মাছের হাইব্রিড জাত পাওয়া যায়। তারপরও মানুষ সুযোগ পেলেই দেশি মাছ কিনতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবেন না।
পুষ্টিমান ও গুণাগুণে ভরা টেংরা মাছ নিয়ে আমরা এই পর্বে আলোচনা করেছি। টেংরা মাছ আকারে ছোট। এই মাছ সারাদেশেই পাওয়া যায়। সুস্বাদু এই মাছটি অনেকের প্রথম পছন্দ। মিষ্টি স্বাদের টেংরার উপকারিতা চলুন দেখে নেয়া যাক-
পরিচয়:
টেংরা মাছ আকারে বেশ ছোট। এর বৈজ্ঞানিক নাম Batasio tengana। এই মাছের মাথায় দুই জোড়া গোঁফ থাকে। দেহ প্রায় গোলাকার। দেহে কোনো আঁশ নেই এবং দেহ বেশ পিচ্ছিল। আত্মরক্ষার জন্য ফুলকার দুই পাশে দুইটি এবং পিঠে একটি সরু কাঁটা থাকে। টেংরা মাছের সরু কাঁটার ক্ষত খুব যন্ত্রণাদায়ক। ইংরেজিতে এই মাছকে বলা হয় Batasio। এটি মূলত Bagridae পরিবারের অন্তর্গত একটি স্থানীয় মাছ। টেংরা মাছ বাংলাদেশের স্থানীয় মাছ। এটি খালে-বিলে বেশি পাওয়া যায়। তবে এখন এই মাছ কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ হচ্ছে।
পুষ্টি উপাদান:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট সায়েন্স ডিরেক্ট, ফিস বেইস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, টেংরা মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাট, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিংকসহ নানা খনিজ উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম টেংরা মাছে রয়েছে-
ক্যালরি- ১৪৪ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ১৯.২ গ্রাম,
চর্বি- ৬.৫ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ২৭০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ২ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ১১ শতাংশ,
পটাসিয়াম- ৮ শতাংশ এবং
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড- ২৩৭ মিলিগ্রাম।
উপকারিতা:
সায়েন্স ডিরেক্ট, ফিস বেইস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, টেংরা মাছ-
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: টেংরা মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া এই মাছে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো মস্তিষ্কের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, যা গবেষণায় প্রমাণিত।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: ভুলে যাওয়া রোগ বা ডিমেনশিয়া দূর করতে টেংরা মাছের জুড়ি মেলা ভার। দেশি প্রজাতির এই মাছে রয়েছে উপকারী চর্বি ও খনিজ উপাদান। মাছে থাকা উপাদানগুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে মাছের তেলের জুড়ি মেলা ভার। টেংরা মাছ আকারে ছোট হলেও এটি পুষ্টি উপাদানে ভরা। নিয়মিত টেংরা মাছ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। কারণ ক্যান্সার প্রতিরোধী সবধরণের উপাদান এই মাছে বিদ্যমান।
দাঁত ও হাড় ভালো রাখে: টেংরা মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও জিংক। এসব উপাদান হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী। টেংরা মাছে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতের মেলানিনের ক্ষয় রোধ করে।
রক্তনালি ভালো রাখে: রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষায় এই মাছ অত্যন্ত কার্যকরী। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ত্বক ভালো রাখে: এই মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে কাজ করে। টেংরা মাছে থাকা প্রোটিন ত্বকের কোলাজেন উন্নত করে।
যৌন শক্তি বাড়ায়: টেংরা মাছ আকারে ছোট হলেও এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফরাস ও পটাসিয়াম। এসব উপাদান ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে তারুণ্য বজায় থাকে ও যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডিরেক্ট, ফিস বেইস ও উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন