• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় ‘দারুচিনি তেল’

ক্যান্সার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় ‘দারুচিনি তেল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মসলা হিসেবে দারুচিনির জুড়ি মেলা ভার। এটি ভেষজগুণেও অনন্য। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, দারুচিনি শুধু মসলাই নয়, সর্বরোগের নিরাময়ক। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ দারুচিনির ঝাঁঝালো স্বাদ রুচিবর্ধক। সুপ্রাচীনকাল থেকে বিশ্বজুড়ে রান্নায় ব্যবহারের জন্য দারুচিনির প্রচলন রয়েছে। দারুচিনিগুড়া ও দারুচিনির তেল আস্ত দারুচিনির চেয়েও বেশি দ্রুত কার্যকারিতা প্রমাণে সক্ষম। দারুচিনির তেল এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে এই তেল শুধু খাওয়া নয়, বাহ্যিক ব্যবহারের জন্যও উপযোগী।

চলুন দেখে নেয়া যাক কী আছে দারুচিনি তেলে-

পরিচয়:
দারুচিনির আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায়। দারুচিনির ইংরেজি নাম Cinnamon। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomus Zeylanicum। যা মূলত একটি মসলা বৃক্ষের নাম। বর্তমানে এটি ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দারুচিনি উৎপাদন হয়। দারুচিনি গাছের শুকনো বাকল থেকে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে তেল উৎপন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ দারুচিনি তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি তেল। দারুচিনি তেলকে ইংরেজি নাম Cinnamon Oil বলা হয়। এই তেল সুগন্ধি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন ও হেলথ বেনিটিফ টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, দারুচিনি তেলে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-বায়োটিক, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টাল উপাদান। এই তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন সি-সহ নানান খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০ গ্রাম দারুচিনি তেলে রয়েছে- 

ক্যালরি- ৬.৪২ কিলোক্যালরি,
ক্যালসিয়াম- ২.১ গ্রাম,
ফাইবার- ১.৬ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ২.১ গ্রাম,
আয়রন- ০.২১ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ১.৫৬ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ১.৬৬ মিলিগ্রাম,
পটাসিয়াম- ১১.২ মিলিগ্রাম এবং
ভিটামিন এ- ০.৩৯ মাইক্রোগ্রাম।

উপকারিতা:
হেলথ লাইন ও হেলথ বেনিটিফ টাইমসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, দারুচিনি তেল-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে দারুচিনি তেল অনন্য। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকরী। যা গবেষণায় প্রমাণিত। নিয়মিত সালাদের সঙ্গে ১ চামচ পরিমাণ দারুচিনি তেল মাখিয়ে নিয়ে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: এই তেলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে থাকা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এটি দেহে থাকা সবধরণের টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: হৃদরোগের পূর্ব আলামত যাদের দেহে বিদ্যমান, তারা নিয়মিত দারুচিনি তেলে খেতে পারেন। এটি চায়ের সঙ্গে বা সালাদে মিশিয়েও খেতে পারবেন। নিয়মিত এই তেল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে।

পেটের সমস্যা দূর করে: যারা অ্যাসিডিটি, পেট ব্যথাসহ পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন, তারা দারুচিনি তেলের সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হবে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি দূর করতে মধুর সঙ্গে দারুচিনি তেল মিশিয়ে খেতে পারেন।

কোলেস্টেরল কমায়: দারুচিনির তেল রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন আধা চা চামচ দারুচিনি তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।

ফাঙ্গালজনিত সমস্যা দূর করে: ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা নিয়মতি সংক্রমিত স্থানে দারুচিনি তেল লাগাতে পারেন। এটি ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করতে খুবই কার্যকরী।

জয়েন্টের ব্যথা কমায়: যারা জয়েন্ট ও হাঁড়ের ব্যথায় ভুগছেন, তারা দারুচিনি তেল ব্যথার স্থানে হালকা গরম করে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দারুচিনি তেল খেতে পারেন। এটি ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকরী।

লিউকেমিয়া দূরে রাখে: লিউকোমিয়ার বিস্তার রোধে দারুচিনি তেল খুবই কার্যকরী। এই তেল হিমোফিলিয়া (রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ) প্রতিরোধ করে। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। ফলে লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমে।

গলাব্যথা ও কাশি দূর হয়: ঠান্ডায় গলাব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে এককাপ গরম পানিতে দারুচিনি তেল ও মধু মিশিয়ে পান করুন। অথবা দারুচিনি তেল হালকা গরম করে গলায় ও পায়ের তালুতে লাগান, দ্রুত সমাধান পাবেন।

সতর্কতা:
স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, দারুচিনি তেল উপকারী হলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখতে হবে। কারণ অধিক পরিমাণে দারুচিনি তেল খেলে হাঁপানি, অ্যাজমা, চুলকানি ও অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ও হেলথ বেনিফিট টাইমস

 

এবি/এসএন

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।