• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারুণ্য ধরে রাখে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ‘মাগুর মাছ’

তারুণ্য ধরে রাখে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ‘মাগুর মাছ’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

মাছে ভাতে বাঙালি’র পাতে মাছ না থাকলে যেন চলেই না। নদীমাতৃক এই দেশে রয়েছে হাজার হাজার জলাশয়। রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল। এসব জলাধারে সুপ্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। দেশি জাতের মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাইন, কই, শিং, টাকি, পুটি, মায়া, পাবদা, ট্যাংরা, মাগুর, শৈল, খৈলস প্রভৃতি। সব মাছেই রয়েছে পুষ্টি উপাদান।

তবে মাগুর মাছ পুষ্টিগুণে যেন অন্য সবার চেয়ে আলাদা। আসল দেশি মাগুর স্বাদে যেমন সেরা, পুষ্টিগুণেও অনন্য। প্রিয় পাঠক, এই পর্বে মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ ও উপাদান নিয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে মাগুর মাছে-

পরিচয়:
মাগুর মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Clarias batrachus। একে ইংরেজিতে বলা হয় walking catfish। যা মূলত Clariidae প্রজাতির স্বাদুপানির মাছ। মাগুর বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটির আদি প্রাপ্তিস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশে এই মাছকে মজগুর, মচকুর বা মাগুর নামে চেনা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এটি ওয়াকিং ক্যাটফিস নামে পরিচিত। কারণ এই মাছ মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। হাঁটার জন্য মাগুর তার দুই পাশের পাখনা ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, হংকং, চীন এবং ইন্দোনেশিয়ায় মাগুর বেশি পাওয়া যায়।

পুষ্টি উপাদান:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, মাগুর মাছে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাট, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়ামসহ নানা খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে রয়েছে-
ক্যালরি- ১০৫ গ্রাম,
চর্বি- ২.৯ গ্রাম,
প্রোটিন- ১৮ গ্রাম,
সোডিয়াম- ৫০ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন বি১২- ১২১ আইইউ,
সেলেনিয়াম- ২৬ শতাংশ,
ফসফরাস- ২৪ শতাংশ,
থিয়ামিন- ১৫ শতাংশ,
পটাসিয়াম- ১৯ শতাংশ,
কোলেস্টেরল- ২৪ শতাংশ,
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড- ২৩৭ মিলিগ্রাম এবং
ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড- ৩৩৭ মিলিগ্রাম।

উপকারিতা:
হেলথ লাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং নিউট্রিশন অ্যাডভান্স ওয়েব সাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, মাগুর মাছ-

তারুণ্য ধরে রাখে: এই মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ফলে তারুণ্য বজায় থাকে। এটি ত্বক কুচকে যাওয়া রোধ করে ও দেহের উদ্দীপ্ত ভাব ধরে রাখে।

মস্তিষ্ক ভালো রাখে: গবেষকরা বলছেন, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে ও মস্তিষ্ক ভালো রাখতে মাগুর মাছের তেল খুবই কার্যকরী। এই মাছে থাকা চবি ও ফ্যাট মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী। এই মাছে থাকা পুষ্টি উপাদান ও খনিজ উপাদান অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: মাগুর মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। যা পরীক্ষিত ও গবেষণায় প্রমাণিত। এ ছাড়া এই মাছে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো মস্তিষ্কের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: তৈলাক্ত মাছ হওয়ায় এতে রয়েছে ডিএইচএ অর্থাৎ ডোকোসাহেক্সানোয়িক অ্যাসিড, যা এক ধরনের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের কোষের ভিত্তি) তৈরিতে সহায়তা করে। ফলে মাগুর মাছ খেলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়।

ডিমেনসিয়া দূরে রাখে: ভুলে যাওয়া রোগ বা ডিমেনশিয়া দূর করতে মাগুর মাছ, বাইন মাছ, শিং মাছ, পাঙ্গাস মাছ বেশ উপকারী। তবে মাগুর মাছ সবার চেয়ে এগিয়েছে। কারণ এটি আকারে বড় হয়, পুষ্টিও বেশি থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: গবেষকরা বলছেন, বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকির প্রবণতা বেশি। কিন্তু নিয়মিত মাগুর মাছ খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। কারণ ক্যান্সার প্রতিরোধী সবধরণের উপাদান এই মাছে বিদ্যমান।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে: রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষায় মাগুর মাছ অত্যন্ত কার্যকরী। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

দাঁত ও হাড়ের সুরক্ষা: মাগুর মাছে রয়েছে আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও জিংক। এসব উপাদান হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী। মাগুর মাছে থাকা খনিজ উপাদান হাড় মজবুত করতে ও দাঁতের মেলানিন ক্ষয় রোধ করে।

ত্বক ভালো রাখে: এই মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। বলিরেখা ও মুখের অবাঞ্ছিত দাগ দূর করে এই কোলাজেন। যা মাগুর মাছে পর্যাপ্ত পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া, নিউট্রিশন অ্যাডভান্স এবং উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।