• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুস্বাস্থ্যের জন্য অনবদ্য উপাদান ‘কচি বাঁশের কোড়ল’

সুস্বাস্থ্যের জন্য অনবদ্য উপাদান ‘কচি বাঁশের কোড়ল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বাঁশ আমাদের বহুল প্রয়োজনীয় একটি উদ্ভিদ। এটি গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি নাম ‘বাঁশ’। নানা কাজে বাঁশের ব্যবহার সুপ্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত। সমতল কিংবা পাহাড়, সবখানেই বাঁশের কদর বেশ। তবে সমতলের তুলনায় পাহাড়ে বাঁশের চাহিদা ও কদর উভয়ই বেশি। কারণ, পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য উপাদান হিসেবে বাঁশ অত্যন্ত জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের পাহাড়ী জনগোষ্ঠী ও সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কচি বাঁশের কোড়ল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি মূলত সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে বিশে^র বিভিন্ন দেশে কচি বাঁশের কোড়ল সবজি, সালাদ ও স্যুপ হিসেবেও জনপ্রিয়। এটি পুষ্টিগুণেও দারুণ। বিশেষ করে জাপান, কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন্স, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে কচি বাঁশের কোড়লে-

পরিচয়:

বাঁশ কয়েক প্রজাতির ফাঁপা কান্ড বিশিষ্ট ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এটি Bambusaceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। গৃহের অবকাঠামো নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাদুর, ঝুড়ি, ফাঁদ ও হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশের ব্যবহার সুপ্রাচীন। তবে কচি বাঁশ বা বাঁশের কোড়ল খাদ্য হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। এটি পুষ্টি উপাদানেও ভরপুর। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে এটি বেশি জনপ্রিয়। যে কারণে বাঁশকে দারুবৃক্ষও (timber) বলা হয়। Melocanna baccifera ব্যতীত বাংলাদেশে উৎপন্ন সকল প্রজাতিই ঘন ঝাড়বিশিষ্ট।

পুষ্টি উপাদান:
পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সায়েন্স ডিরেক্ট ও ন্যাচার ডট কমে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাঁশের কোড়ল বা কচি বাঁশে রয়েছে ক্যালরি, পর্যাপ্ত আঁশ, পরিমিত ফ্যাট, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, প্রোটিনসহ নানা পুষ্টি উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁশের কোড়ল বা কচি বাঁশে রয়েছে-

ক্যালরি- ৪২ শতাংশ,
ফ্যাট- ০.৭ গ্রাম,
সোডিয়াম- ৬ মিলিগ্রাম,
পটাশিয়াম- ৮০৫ মিলিগ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ৮ গ্রাম,
প্রোটিন- ০.৯ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৮ গ্রাম,
ভিটামিন ই- ১০ শতাংশ,
আয়রন- ৪ শতাংশ এবং
ম্যাগনেশিয়াম- ১ শতাংশ।

উপকারিতা:
সায়েন্স ডিরেক্ট, ন্যাচার ডট কম ও বাংলা পিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাঁশের কোড়ল বা কচি বাঁশ-

কোলেস্টেরল কমায়: বাঁশের কোড়লে রয়েছে পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ, যা রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। নিয়মিত বাঁশের কোড়ল খেলে দেহ থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কচি বাঁশের কোড়লে থাকা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এতে থাকা পটাসিয়াম হৃদস্পন্দন স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে: কচি বাঁশের কোড়লে রয়েছে স্বল্প পরিমাণে ক্যালরি ও ফ্যাট, সেই হিসেবে এতে আঁশ বা ফাইবার বেশি। ফলে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তারা নিয়মিত এই খাবারটি গ্রহণ করতে পারেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: এতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আমাদের শরীরের কোষে অবস্থিত ক্রোমোজোমের টিস্যুর ক্ষতি সাধন করে। ফলে ক্যান্সার হয়। কিন্তু বাঁশের কচি কোড়লে থাকা ক্লোরোফিল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

প্রদাহ কমায়: কচি বাঁশের কোড়ল সবজি হিসেবে নিয়মিত খান। কারণ এটি শরীরের যেকোনো প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ভাইরাসের আক্রমণজনিত প্রদাহ কমাতেও কচি বাঁশের কোড়ল কার্যকরী।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: এতে থাকা খাদ্যআঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে মল নরম করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কচি বাঁশের কোড়লে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ ও ভিটামিন। যা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হাড় মজবুত করে: এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। যা গবেষণায় প্রমাণিত।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডিরেক্ট, ন্যাচার ডট কম ও বাংলা পিডিয়া

 

এবি/এসএন

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:৫৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।