• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাদে-গন্ধে গুণে মানে অনন্য ‘কবুতরের মাংস’

স্বাদে-গন্ধে গুণে মানে অনন্য ‘কবুতরের মাংস’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রাণীজ আমিষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসিম। নানা ধরণের প্রাণীদেহ ও প্রাণীর ডিম ও দুধ থেকে আমরা আমিষ পেয়ে থাকি। আমাদের দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ নানা প্রজাতির গৃহপালিত পশুর মাংস খাওয়ার প্রচলন বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গৃহপালিত হাঁস, মুরগি ও কবুতরের মাংস মাংস বেশ জনপ্রিয়। তবে কবুতরের মাংস পছন্দের শীর্ষে। এটি শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বাজারে এখন গৃহপালিত কবুতর কিনতে পাওয়া যায়।

‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য এই পর্বে কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ নিয়ে কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক।

পরিচয়:

কবুতর ইংরেজি নাম Pigeon। এর বৈজ্ঞানিক নাম Columba livia domestica। বাংলাদেশে কবুতরের আরও কিছু নাম প্রচলিত আছে। যেমন- পায়রা, কপোত ও পারাবত। এই প্রজাতির কবুতরগুলো মূলত বাড়িতে লালন-পালন করা হয়। প্রাচীন কাল থেকেই কবুতরের মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটি পুষ্টিগুণে অনন্য। এক প্রকারের জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। কথিত আছে, কবুতরের মাধ্যমে এক সময় চিঠি আদান-প্রদান করা হত। কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতা প্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি প্রচলিত আছে। গবেষকরা বলছেন, গৃহপালিত কবুতরের উদ্ভব মূলত বুনো কবুতর (Columba livia) থেকে।

পুষ্টি উপাদান:
বিজ্ঞানবিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশক সায়েন্স ডিরেক্ট ওয়েবসাইট, ট্যানডস অনলাইন ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, কবুতরের মাংসে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। অন্যান্য মাংসের তুলনায় কবুতরের মাংস দ্রুত হজম হয়, ফলে এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, ভিটামিন, বি, আয়রন, জিংক, সেলেনিয়াম এবং কপার।

প্রতি ১০০ গ্রাম কবুতরের মাংসে রয়েছে-

ক্যালরি- ১২.৩১ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ১৩.৫০ গ্রাম,
ফ্যাট- ২.৬৭ গ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ০.০৮ মিলিগ্রাম,
ফসফরাস- ০.৩১ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ- ১১ শতাংশ,
ভিটামিন ডি- ১০ শতাংশ এবং
ভিটামিন ই- ৭.২১ শতাংশ।

উপকারিতা:
সায়েন্স ডিরেক্ট ওয়েবসাইট, ট্যানডস অনলাইন ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, শরীরের পুষ্টি চাহিদা পুরনের পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে কবুতরের মাংস। বিশেষ করে-

ক্ষত সারায় দ্রুত: অস্ত্রপচারের পর রোগীর ক্ষত সারাতে কবুতরের মাংসে থাকা সেলেনিয়াম কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। যে কারণে চিকিৎসকরা প্রায়ই রোগীদের এই মাংস খাওয়ার পরামর্শ দেন।

কিডনী ভালো রাখে: চীনের একদল গবেষকদের বরাত দিয়ে সায়েন্স ডিরেক্ট ওয়েবসাইট জানিয়েছে, কিডনী ভালো রাখতে সপ্তাহে অন্তত একবার কবুতরের মাংস খাওয়া প্রয়োজন। এটি কিডনীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

দেহের শক্তি বাড়ায়: গবেষকরা বলছেন, কবুতরের মাংস প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কার্যকরী। এতে থাকা খনিজ উপাদান ও ভিটামিনস দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বয়স্ক, অসুস্থ, হাইপারলিপিডেমিয়া, কার্ডিওভাসকুলার এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগী এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কবুতরের মাংস খুবই উপকারী।

যৌন আকাঙ্খা বাড়ায়: পুরুষের যৌন আকাঙ্খা টেস্টোস্টেরন হরমনের ওপর নির্ভর করে। এই হরমন সঠিক মাত্রায় থাকলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই টেস্টোস্টেরন হরমন বৃদ্ধিতে বুস্টারের কাজ করে কবুতরের মাংস।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে যেসব খনিজ ও ভিটামিন প্রয়োজন, তার সবই আছে কবুতরের মাংসে। কাজেই এই মাংস খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাকের কাজ উদ্দীপিত করে: কবুতরের মাংসে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়ামসহ নানা উপাদান, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকের কাজ শক্তিশালী করে।

গর্ভবর্তী নারীর জন্য: গর্ভবতী নারীদের প্রোটিনের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি হজমক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে কবুতরের মাংস খুবই উপযোগী একটি খাদ্য উপাদান। কারণ মাংস খাওয়ার কারণে অনেক গর্ভবতী নারী হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, কিন্তু কবুতরের মাংস খেলে হজমে সমস্যা হয় না। এটি গর্ভপরবর্তী প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যায়ও খুবই প্রয়োজনীয়।

শিশুদের আদর্শ প্রোটিনের উৎস: এই মাংস অত্যন্ত নরম ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। যে কারণে শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা পুরণের অন্যতম সেরা উপায় হতে পারে কবুতরের মাংস।

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায়: এতে থাকা ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের উপাদান হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী।

পরামর্শ

কবুতর একটি সুদর্শন পাখি প্রজাতির প্রাণী। আগে বাংলাদেশে বুনো কবুতর দেখা গেলেও এখন তার সংখ্যা কমে গেছে। গৃহপালিত কবুতর ছাড়া বুনো কবুতর ও অন্যান্য সবধরণের পাখি শিকার থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আমাদের প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতি ধ্বংস করবেন না। কবুতরের মাংস খাওয়ার জন্য গৃহপালিত কবুতরের ওপর নির্ভরতা ধরে রাখুন।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডিরেক্ট, ট্যানডস অনলাইন ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৩৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।