• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনন্য দারুচিনির দারাজ উপকারিতা

অনন্য দারুচিনির দারাজ উপকারিতা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

দারুচিনি। মসলা হিসেবেই পরিচিত। তবে এটি মসলার চেয়ে বেশি কিছু। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ দারুচিনি ভেষজগুণে ভরপুর। রান্নায় বাড়তি স্বাদ ও গন্ধের জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে এই উপাদানটি ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রদাহ কমাতে ও স্নায়বিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে দারুচিনির জুড়ি মেলা ভার। সুগন্ধি এই মসলাটি শুধু রান্না নয়, দেহের বাহ্যিক আবরণেও ব্যবহার করা যায়।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে দারুচিনির উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও অজানা কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক কী আছে দারুচিনিতে-

পরিচয়:
দারুচিনির ইংরেজি নাম Cinnamon। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomus Zeylanicum। যা মূলত একটি মসলা বৃক্ষের নাম। দারুচিনির আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায়। তবে বর্তমানে এটি ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ও চীনসহ বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দারুচিনি উৎপাদন হয়। দারুচিনি গাছের বাকল মূলত দারুচিনি হিসেবে পরিচিত। এটি থেকে সুগন্ধি তেলও উৎপন্ন করা হয়।

পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, বিবিসি ডট হেলথ ও হেলথ বেনিটিফ টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর দারুচিনি। এতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি-সহ নানান খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০ গ্রাম দারুচিনিতে রয়েছে-

ক্যালরি- ৭ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ০.১ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ০.৯ গ্রাম,
ফাইবার বা খাদ্যআঁশ- ১.৬ গ্রাম।

উপকারিতা:
হেলথ লাইন, বিবিসি ডট হেলথ ও হেলথ বেনিটিফ টাইমসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, দারুচিনি-

জয়েন্ট ও হাঁড়ের ব্যথা উপশম করে: যারা জয়েন্ট ও হাঁড়ের ব্যথায় ভুগছেন, তারা দারুচিনি খেতে পারেন। হালকা উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ মধু আর দারুচিনিগুঁড়া ভালোভাবে মিশিয়ে তা ব্যথার জায়গায় মালিশ করলে উপশম পাওয়া যায়। এটি নিয়মিত ৩-৪ দিন করতে হবে।

পেটের সমস্যা দূর করে: অ্যাসিডিটি ও পেটের ব্যথা নিরাময়ে দারুচিনি খুবই কার্যকরী। পেট পরিষ্কার করতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি দূর করতে মধুর সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।

রক্তে এলডিএল হ্রাস করে: দারুচিনির গুঁড়া রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের মাত্রা কমায়। প্রতিদিন ২ ইঞ্চি পরিমাণ দারুচিনি দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি এক কাপে পরিণত করুন। এরপর তা গরম চায়ের মতো পান করুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে দারুচিনির জুড়ি মেলা ভার। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ২ ইঞ্চি পরিমাণ দারুচিনি দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি এক কাপে নিয়ে এসে চায়ের মতো পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শরীরের ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করে: যাদের শরীরের নানান স্থানে ছত্রাকজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন। ছত্রাকজনিত ইনফেকশন দূর করতে প্রতিদিন ২ ইঞ্চি পরিমাণ দারুচিনি দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি এক কাপে পরিণত করে চায়ের মতো পান করতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার এই পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: অনেকের বুকে চিনচিন ব্যথা, হাঁটতে কষ্ট হয়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়। এগুলো হৃদরোগের লক্ষণ। যারা এধরণের জটিলতায় ভুগছেন, তারা ১০০ গ্রাম জিরার গুঁড়া, ১০০ গ্রাম ধনিয়ার গুঁড়া, ৫০ গ্রাম দারুচিনির গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ এককাপ গরম পানিতে এক চা– চামচ মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কমায়: মরণব্যাধি লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়ার বিস্তার রোধে দারুচিনি খুবই কার্যকরী। এ ছাড়া রক্ত জমাট না বাঁধার অসুখ হিমোফিলিয়া প্রতিরোধ করতে দারুচিনি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, যার ফলে লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়ার প্রকোপ কমে যায়।

বাতের ব্যথা রোধ করে: বাতের ব্যথা ও শরীরের হাড়ের ব্যথা নিরাময়ে আধা চামচ দারুচিনির গুঁড়া এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া দারুচিনি–মিশ্রিত সরিষার তেল গায়ে মালিশ করলেও ব্যথা উপশম হয়।

গলাব্যথা ও খুশখুশে কাশি দূর হয়: ঠান্ডায় গলাব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে এককাপ গরম পানিতে দারুচিনি, মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে গলায় আরাম পাওয়া যায় ও কাশি কমে যায়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। কিন্তু নিয়মিত প্রতিদিন একবেলা ২ ইঞ্চি পরিমাণ দারুচিনি দুই কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি এক কাপে পরিণত করুন। এরপর সেই পানি চায়ের মতো পান করুন। এতে স্মৃতিশক্তি হ্রাস হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।

সতর্কতা:
পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য গবেষকরা বলছেন, দারুচিনি অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান হলেও এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। দিনে দুই চা চামচের বেশি দারুচিনি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। মাত্রাতিরিক্ত দারুচিনি খেলে ডায়রিয়া ও মাথা ব্যথার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া দারুচিনি থেকে পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে প্যাকেটজাত দারুচিনিগুঁড়া ও দারুচিনি পরিহার করা উচিত।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, বিবিসি ডট ফুড ও হেলথ বেনিফিট টাইমস

 

এবি/এসএন

০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৫৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।