• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিতে ভরপুর আনারস

পুষ্টিতে ভরপুর আনারস

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল আনারস। এখন দেশে আনারসের ভরা মৌসুম। মূলত ময়মনসিংহ, টাঙাইল, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে এই ফল বেশি চাষ করা হয়। দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও রোগ নিরাময়ে আনারস খুবই কার্যকরী।

পরিচয় : আনারস এক ধরণের গুচ্ছ ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ananas comosus Merr। এই ফলের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। তবে বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্রই আনারসের চাষাবাদ হচ্ছে। কোস্টারিকা, ব্রাজিল ও ফিলিপাইন আনারস উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ রয়েছে।

সুস্বাদু এই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। চলুন দেখে নেয়া যাক, আনারসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

আনারসের পুষ্টি উপাদান

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পুরণে অত্যন্ত কার্যকরী।

ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়
আনারসে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি ঠাণ্ডা-কাশি ও ভাইরাসজনিত রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। জ্বর ও জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আনারস হতে পারে দারুণ এক ওষুধ। এছাড়া নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা এবং ব্রংকাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারস খেতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে আনারস
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে আনারসের জুড়ি মেলা ভার। এতে রয়েছে ব্রোমেলিন। যা আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধিতে দারুণ একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে।

চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়
গবেষকরা বলছেন, ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আনারস আমাদের রক্ষা করে। রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয়। ফলে আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন, যা আমাদের চোখের বিশেষ সুরক্ষায় ৩০ শতাংশ কার্যকর।

হাড়ের সুস্থতায় আনারস
এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় গঠনে সহায়ক। আর ম্যাংগানিজ হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। তাই খাদ্য তালিকায় আনারস রাখা যেতেই পারে।

দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা
আনারসে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়া মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে আনারস দ্রুত কাজ করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ
আনারস আমাদের ওজন কমাকে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। সেই তুলনায় ফ্যাট রয়েছে একেবারেই কম। সালাদ হিসেবে আনারস খাওয়ার অভ্যাস আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরি একটি পদ্ধতি হতে পারে। এটি জুস করেও খাওয়া যায়।

ক্যানসারসহ হৃদরোগ নিরাময়ে আনারস
দেহের কোষের ওপর ফ্রি-রেডিকেলের বিরূপ প্রভাবে ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে, যা প্রতিরোধ করে আনারস।

আনারস যখন ক্ষতিকর

আনারস একটি অ্যাসিডিক এবং টক জাতীয় ফল। দুধের মধ্যে যে কোনো টক জাতীয় জিনিস দিলে দুধ থেকে ছানা কেটে যেতে পারে। কাজেই দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে হতে পারে বদহজম, পেটফাঁপা ও ডায়রিয়া। গবেষকরা বলছেন, দুধ ও আনারস একসঙ্গে খাওয়ার কারণে বিষক্রিয়া হওয়ার যে আশঙ্কার কথা সবাই জানে, তা মূলত ভুল। আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলেও বিষক্রিয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তবে আনারসের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে, চলুন জেনে নেই

নারীর গর্ভপাত ঝুঁকি
আনারসের কারণে নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যে কারণে গর্ভবতী নারীদের আনারস খেতে নিষেধ করা হয়। এমনকি গর্ভাবস্থার পরেও নারী আনারস খেতে চাইলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বাতের ব্যথা বৃদ্ধির ঝুঁকি
আনারস আমাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল নালীর কাছে পৌছানোর পর অ্যালকোহলে পরিণত হয়। যে কারণে দেহে বাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। তাই যারা বাতের ব্যথায় ভুগছেন, তারা আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতা
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি। এতে রয়েছে সুক্রোজ ও ফ্রুক্টোজ। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের আনারস খাওয়া ঠিক হবে না।

ওষুধের প্রতিক্রিয়া
আনারসে রয়েছে ব্রোমিলেইন। যা দিযে ওষুধ বানানো হয় এবং তা প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের দেয়া হয়। তাই আপনি যদি অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিকনভালসেন্ট ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপাতত আনারস থেকে দূরে থাকুন।

কাঁচা আনারস যেন বিষ
অনেকেই কাঁচা আনারস দিয়ে জুস বানিয়ে খান। কিন্তু জেনে রাখা ভালো। কাঁচা আনারস নিজেই এক ধরণের বিষ। তাই কাঁচা আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

 

এবি/এসএন

২৪ জুলাই ২০২১, ০৭:৫৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।