• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী ফলের এত জাদু!

দেশী ফলের এত জাদু!

ফিচার ডেস্ক

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ পেরিয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালীন দেশী ফলের মৌসুমও শেষ হওয়ার পথে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, লটকন, ডেওয়া, কলা, তরমুজ, আনারস এখনও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব ফলের মধ্যে প্রচুর ক্যালোরি (খাদ্যশক্তি) থাকে, যা শরীরের ভেতর থেকে ক্ষতিকর চর্বি বের করে দে। আর এ জন্যই ফল সবচেয়ে উপকারী।

পুষ্টিমানের দিক থেকেও সব ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে রঙিন ফলে লাইকোপেট আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ভেতরের বিষাক্ত জিনিস দূর করে। আর তাই বাংলাদেশে সহজলভ্য কয়েকটি ফলের পুষ্টিগুণ নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

ফলের পুষ্টিগুণ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা : অনেকেই মনে করেন, বিদেশী ফল মানেই এর পুষ্টিগুণ বেশি। ব্যাপারটি একেবারেই ভ্রান্ত। আমাদের দেশে যেসব ফল উৎপাদন হয়, তার পুষ্টিগুণ কোনোভাবেই বিদেশী ফলের চেয়ে কম নয়, বরং বেশি। গবেষণায় যা প্রমাণিত হয়েছে।

পুষ্ঠিবিদরা বলছেন, সব ফলেই পুষ্টিগুণ রয়েছে। টক, মিষ্টি ও অন্যান্য স্বাদের ফলগুলোর পুষ্টিগুণ একই। বিদেশী টক ফল ও দেশীয় টক ফলের পুষ্টি যেমন এক, তেমনই দেশী মিষ্টি ফলের পুষ্টিগুণ কোনো অংশে বিদেশী ফলের চেয়ে কম নয়। প্রত্যেকটি ফলে ভিন্ন ভিন্ন গুণাগুণ রয়েছে, যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

খাদ্য ও পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হলেও একজন মানুষ ইচ্ছেমত ফল খেতে পারবেন না। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অথবা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ফল খেতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত ফল খাওয়ার কারণে অনেকেই নানা সমস্যায় ভুগতে পারেন।

আসুন জেনে নিই কয়েকটি দেশী ফলের পুষ্টিগুণ

কাঁঠাল : বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এটিই একটি মাত্র ফল, যার কোনা অংশই বাদ যায় না। কোনো না কোনোভাবে তা খাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে বাংলাদেশে কাঁঠাল ব্যাপক জনপ্রিয় একটি ফল।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ি, কাঁঠালে প্রচুর শক্তি রয়েছে। কাঁঠালে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি। কাঁচা কাঁঠালে ফাইবারের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। যে কারণে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য কাঁচা কাঁঠাল খুবই উপকারী। রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠাল অতুলনীয়।

উপাদান : কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক, নায়াসিনসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী।

আম : দেশের জাতীয় ফল ‘আম’। স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিতে অনেকেই আমকে মনে করেন ফলের রাজা। দেশে গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে এপ্রিলের শুরু থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। বিভিন্ন আচার ও টকমিষ্টি সালাদ তৈরিতে কাঁচা আম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে মে মাস থেকে আম পাঁকতে শুরু করে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে আম পাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ : বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে-আয়রন ও সোডিয়ামে পরিপূর্ণ থাকে আম। এছাড়া আমে ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, খনিজ লবণ, ভিটামিন-বি, সেলেনিয়াম, এনজাইম ও টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। যে কারণে আম শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করতে সহায়তা করে এই ফল। আমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এছাড়া আমের আরও নানা উপকারিতা রয়েছে।

উপকারিতা : খসখসে চামড়া, চুলপড়া, চোখের নানা রোগ ও হজমের সমস্যা দূর করতে আম ব্যাপক কার্যকরী। এছাড়া বলবৃদ্ধিকারক, মুখরোচক ও যকৃতের জন্য উপকারী আম।

জাম : দেশের বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে রাস্তার পাশে দেখা মেলে জাম গাছের। জাম দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি ফল। অরুচি ও বমিভাব নিরাময়ে জাম বিশেষভাবে কার্যকরী। জাম দেহে রক্ত তৈরি করে বলেও ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

উপাদান : দেশী জামে খাদ্য শক্তি, শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন-সি ও প্রচুর ক্যারোটিন থাকে।

উপকারিতা: এটি শরীরের হাড় মজবুত করে। ডায়রিয়া ও আলসার নিরাময় বিশেষ ভূমিকা রাখে জাম। এই ফল ত্বক টানটান করতে সহায়তা করে। এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং ডিটক্সিফায়ার হিসাবেও জাম ব্যাপক কাজ করে।

পেয়ারা : বাংলাদেশে এখন সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। পেয়ারা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। ঝাঁঝালো মসলা মেখে পেয়ারা খেতে কে না চায়? দেশে পুষ্টিমানে অনন্য ফল পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ৫১ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১১.২০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি আর ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, আপেলের চেয়ে কোনো অংশেই পুষ্টিগুণে পিছিয়ে নেই পেয়ারা।

আমড়া : মে মাসের মাঝামাঝি থেকেই দেশে আমড়া পাওয়া যায়। এছাড়া বারোমাসি জাতের আমড়াও এখন বাজারে এসেছে। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ আমড়া দেশের বহুল জনপ্রিয় একটি ফল। এর রয়েছে বিশেষ পুষ্টিগুণ।

উপাদান : প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়াতে ৬৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৫ গ্রাম শর্করা, ১.১০ গ্রাম আমিষ, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন- সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম আয়রণ, ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৮৩.২০ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে।

উপকারিতা : পিত্ত ও কফ নিবারণে ব্যাপক কার্যকরী আমড়া। এছাড়া রুচিবর্ধক হিসাবে আমড়ার গুণাগুণ ব্যাপক। আমড়া শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

জামরুল : এই ফলে রয়েছে ক্যারোটিন ও ভিটামিন-বি। যাদের ডায়বেটিস রয়েছে, তাদের জন্য জামরুল অত্যন্ত উপকারী একটি ফল।

লটকন : লটকন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ টক-মিষ্টি একটি ফল। এই ফল দেশের নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণে ভরপুর লটকন বমিবমি ভাব দূর করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও লটকনের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া রুচিবর্ধক হিসবে লটকন খুব জনপ্রিয়।

 

আমরাই/এসএন

১৩ জুলাই ২০২১, ০৭:০৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।