• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গরুর মাংস কীভাবে, কতটুকু খাবেন

গরুর মাংস কীভাবে, কতটুকু খাবেন

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

গরুর মাংসের নাম শুনলেই অনেকের জিভে পানি চলে আসে। অনন্য স্বাদের মাংস হিসেবে গরুর মাংসের জুড়ি মেলা ভার। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গরুর মাংস খেয়ে থাকেন। তবে আমাদের অনেকের মধ্যেই গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, গরুর মাংস খেলেই স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়।

কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। গবেষকরা বলছেন, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিকের পাশাপাশি অনেক উপকারী গুণাবলী রয়েছে। এমনকি গরুর মাংসে যেসব উপকারী উপাদান পাওয়া যায়, তা অন্য কোনো খাবারে পাওয়া যায় না।

‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য গরুর মাংসের উপকারী দিক এবং একজন ব্যক্তি কতটুকু মাংস খেতে পারবেন, এসব বিষয়সহ বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হল।

প্রাথমিক কথা : গরুর মাংসে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আপনি যদি নিয়ম মেনে পরিমিত গরুর মাংস খান, তবে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে উপকারী। কাজেই খাওয়ার সময় অবশ্যই অতিরিক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, আমাদের শরীরের জন্য প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল বা যেসব খনিজ উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়; তার অধিকাংশ উপাদানই রয়েছে গরুর মাংসে। এতে রয়েছে জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন-বি২, বি৩, বি৬, ও বি১২।

কার্যকারিতা

গরুর মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের পেশী, দাঁত ও হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য গরুর মাংস ব্যাপক কার্যকরী। এছাড়া ক্ষত নিরাময়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি, অলসতা ও অসাড়তা দূরীকরণ, ডায়রিয়া রোধ, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিসহ নানা রোগ প্রতিরোধে গরুর মাংস খুবই কার্যকরী।

গরুর মাংস কে কতুটুকু খাবেন:

গরুর মাংস শক্তিবর্ধক একটি খাবার। যা একবারে অধিক পরিমাণে খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। তবে গরুর মগজ ও কলিজায় প্রোটিন কম থাকলেও তাতে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। কাজেই গরুর মাংস খাওয়ার সময় আমাদের সতর্ক ও সংযত হওয়া উচিত।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, একজন মানুষের ওজন ৫০ কেজি। এই ওজনের একজন সুস্থ সবল মানুষ প্রতিদিন ৫০ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারবেন। তবে কিডনি জটিলতা থাকলে ৫০ কেজি ওজনের একজন মানুষ দৈনিক ২৫ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারবেন।

এছাড়া মাসিক চলাকালীন নারী কিংবা গর্ভবতী নারী সুস্থ অবস্থায় ১০০ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারেন। কারণ গর্ভবতী ও ঋতুবর্তী নারীর জন্য দৈনিক ১০০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও দরকারী।

ঠিক একইভাবে যাদের শারীরিক ওজন ৫০ কেজির কম অথবা বেশি, তারা আনুপাতিক হারে গরুর মাংস খেতে পারবেন। তবে যে কেউ যদি দিনে ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি গরুর মাংস খায়, এটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

ব্রিটেনের একটি স্বাস্থ্য গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রাম প্রোটিন ও ২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তাহলে কি আপনি মাংস খাওয়া বাড়িয়ে দিবেন?

মোটেই না, কারণ মাংস ছাড়াও অন্যান্য খাবার থেকে আমরা প্রতিদিনই প্রোটিন পেয়ে থাকি। তাই গরুর মাংস কম খাওয়াই ভালো।

গরুর মাংস কতটুকু খাওয়া নিরাপদ

যখন বাড়িতে গরুর মাংস হয়, তখন অন্যান্য উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ কমিয়ে ফেলুন। কারণ, গরুর মাংস থেকেই অনেক প্রোটিন আমরা পেয়ে থাকি। একটা বিষয় সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই এক নাগাড়ে গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। একাধারে গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোষ্টকাঠিন্য বেড়ে যেতে পারে। পরিপাক তন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাইপার-টেনশন কিংবা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গরুর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

ঝুঁকি কমাতে যেভাবে খাবেন গরুর মাংস 

গরুর মাংস আপনার জন্য কতোটা নিরাপদ, সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনি কিভাবে সেটি রান্না করছেন, তার ওপর।

মার্কিন একটি হেলথ জার্নালে গবেষকরা বলেছেন, গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হল গরুর পেছনের রানের উপরে ফোলা অংশ এবং পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস; যেটাকে সেরলয়েন বলা হয়।

তবে মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে, সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনা সম্ভব। আর তা আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে। তাই রান্নার আগে অবশ্যই গরুর মাংসের গায়ে লেগে থাকা চর্বি কেটে ছাড়িয়ে নিন। মাংসের টুকরা গুলো ছোট ছোট করুন। মাংসের টুকরা যত ছোট হবে, চর্বির পরিমাণও তত কম থাকবে।

প্রয়োজনে মাংস রান্নার আগে ভিনেগার, টক দই অথবা লেবুর রস দিয়ে মাখিয়ে ঘণ্টাখানিক রেখে দিন। পরে রান্না করুন। এতে মাংসের ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কমে যাবে।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, গরুর মাংসের কসানো ভুনা ও ঝোল না খাওয়াই ভালো। কারণ, এই দুই প্রকার রান্নায় মসলা আধিক্য থাকে। যা আপনার গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ ছাপিয়ে হয়ে যেতে পারে ক্ষতির কারণ।

 

এবি/এসএন

২১ জুলাই ২০২১, ০৪:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।