• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গলা ধরা ওলের যত পুষ্টি

গলা ধরা ওলের যত পুষ্টি

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ওল। গলা চুলকানোর ভয়ে অনেকেই এই সবজিটি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু আপনি কি জানেন, ওল কতটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ? একটা সময় প্রবাদ ছিল ‘ওল খেয়ো না ধরবে গলা’, এখন আর সেই যুগ নেই। আধুনিক কৃষি ও চাষপদ্ধতির যুগে এখন ওল খাওয়া আতঙ্কের কিছু নয়। এটি বেশ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি বরং।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক ওলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে

পরিচয়

ওল মাটির নিচে জন্মানো একটি গুঁড়িকন্দ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Amorphophallus Paeoniifolius। ওলের গুঁড়িকন্দ প্রজাতির গোলাকার বা লম্বাটে আকারের সবজি। এটি যে কোনো আকারের হতে পারে। ওল গাছ বোঁটা থেকে সরাসরি মাটির ওপর থেকে বের হয়। পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং মহারাষ্ট্র রাজ্যে এটি ব্যাপক আবাদ হয়। বাংলাদেশেও ওল চাষ হয়। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটির আবাদ আমাদের দেশে এখনো শুরু হয়নি। কয়েকরকম ওল পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম বুনো ওল, পার্পেল ওল, সাদা ওল, চাইনিজ ওল ইত্যাদি। তবে আমাদের দেশে সাদা ওল ও চাইনিজ ওর বেশি পাওয়া যায়। মানুষ এই দুই প্রকারের ওল খেতে পছন্দ করে।

পুষ্টিগুণ

কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন এই সময় ও কৃষি তথ্য সার্ভিসে (বিডি) প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওলে রয়েছে ক্যালরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আঁশ, সুগার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ-সহ অন্যান্য আরও খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম ওলে রয়েছে

জলীয় অংশ ৬৯.৬ গ্রাম
ক্যালরি ১১৮ ক্যালোরি
প্রোটিন ১.৫৩ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ২৭.৮৮ গ্রাম
ফাইবার ৪.১ গ্রাম
সুগার ০.৫ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৭ মাইক্রোগ্রাম
আয়রন ০.৫৪ মাইক্রোগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ২১ মাইক্রোগ্রাম
ফসফরাস ৫৫ মাইক্রোগ্রাম
পটাশিয়াম ৮১৬ মাইক্রোগ্রাম
সোডিয়াম ৯ মাইক্রোগ্রাম
জিঙ্ক ০.২৪ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি ১৭.১ মাইক্রোগ্রাম
থায়ামিন ০.১১২ মাইক্রোগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.০৩২ মাইক্রোগ্রাম
নিয়াসিন ০.৫৫২ মাইক্রোগ্রাম এবং
ভিটামিন বি৬ ০.২৯৩ মাইক্রোগ্রামসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান।

উপকারিতা

কলকাতাভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘স্টাইল ক্রেইজি’-তে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওল খেলে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে : এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে অ্যালেনটাইন (Allantoin) নামক উপাদান, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : গবেষণা বলছে, ওলে থাকা অ্যালেনটাইন নামক উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে এল-আর্গিনাইন যৌগ। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ওজন কমায় : নিয়মিত ওল খেলে ওজন কমে। এতে অ্যান্টি-ওবেসিটি প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ওলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান ও খাদ্যআঁশ। যা স্থুলতা কমায় এবং দেহের বাড়তি মেদ ঝরাতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি দেহে প্রদাহ কমায়। ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

মস্তিষ্ক স্বাভাবিক রাখে : ওলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি-৬, যা খিটখিটে মেজাজ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে : ওলে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ফোলেট, যা রক্তশূন্যতা দূর করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য ওল খুবই কার্যকরী একটি সবজি। এতে থাকা খাদ্যআঁশ হজমক্রিয়া উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, মল নরম হয়। এটি দেহের মেটাবলিজম উন্নত করে।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে : এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ভিটামিন বি (নিয়াসিন)। এসব উপাদান ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুবই কার্যকরী। এছাড়া ওলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি৬, যা চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে।

সতর্কতা

ওল খেলে অনেকের অ্যালার্জি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে ওর খেলে বমি বা বমিবমি ভাব হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের ওল না খাওয়ায় ভালো, কারণ এটি হরমোন পরিবর্তনে কাজ করে। যাদের দেহে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে, তারা ওল এড়িয়ে চলুন।

তথ্যসূত্র : এই সময় (ম্যাগাজিন), কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন/আরএ

০২ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।