• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্টিগুণে অনন্য কাঁঠাল

পুষ্টিগুণে অনন্য কাঁঠাল

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ফলের রাজা কাঁঠাল। বাঙালি জাতির অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। গ্রীষ্মকালীন এই ফল পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালের সবজি ভোজন রসিক বাঙালির অত্যন্ত প্রিয়। এছাড়া কাঁঠালের বিচি ভাজি করেও খাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালে পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম কিংবা শহর, কাঁঠালের জনপ্রিয়তা সারা বাংলায়। কাঁঠালের জনপ্রিয়তার কারণ তার পুষ্টিগুণ ও স্বাদ। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর কাঁঠালের এখন ভরা মৌসুম।

তাই ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমাদের আজকের এই পর্ব। এর মাধ্যমে ‘কাঁঠালের পুষ্টিগুণ’ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনারা পেতে পারেন। চলুন দেখে নিই, কী আছে এই পর্বে-

কাঁঠাল সম্পর্কে জানুন : কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus (ইংরেজি নাম: Jackfruit)। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্যাক গাছ নামেও পরিচিত। দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট এবং মালয়েশিয়ার রেইন ফরেস্টের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কাঁঠাল গাছের উৎপত্তি। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় নিম্মভূমিতে ভালো জন্মে। কাঁঠাল সাধারণত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। রান্না করা কাঁচা কাঁঠাকে ‘এঁচোড়’ বলে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফল ‘কাঁঠাল’।

কি আছে কাঁঠালে : রসালো ফল কাঁঠালে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। এছাড়া এই ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, বি-১, বি-২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এসব পুষ্টি ও খনিজ উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকারী।

এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে ৬.৬ গ্রাম আমিষ ও ২৫.৮ গ্রাম শর্করা আছে। যে কারণে কাঁঠালকে অনেকেই বলবর্ধক ফল হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।

কাঁঠালের হলুদ রঙের কোষ হচ্ছে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। ২-৩ কোয়া কাঁঠাল এক দিনের ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ করে। স্বাভাবিক আকারের কাঁঠালের ৪-৫ কোয়া থেকে ১০০ কিলোক্যালরি পর্যন্ত খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।

কাঁঠালের উপকারিতা

শক্তির উৎস : কাঁঠালে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা, ক্যালোরি, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ থাকে। যা মানুষের দেহের শক্তি অল্প সময়ের মধ্যে বৃদ্ধি করে। একই সঙ্গে কাঁঠালে কোলেস্টেরল জাতীয় কোনো উপাদান না থাকায় তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : সর্দি-কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ নানা রোগ প্রতিহত করতে কাঁঠালের জুড়ি মেলা ভার। ভিটামিন-সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের দারুণ এক উৎস কাঁঠাল। যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

রক্তস্বল্পতা রোধে কাঁঠাল : ভিটামিন-এ, সি, ই, কে, নিয়াচিন, ফলেট ও  ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ কাঁঠাল রক্ত স্বল্পতা দূর করতে ব্যাপক কার্যকরী। এছাড়া কাঁঠালে মিনারেল সমৃদ্ধ খনিজ উপাদান কপার, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের জন্য প্রাকৃতিক ওষুধ হতে পারে কাঁঠাল।

গর্ভবতী মায়ের খাবার : চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন গর্ভবতী নারী প্রতিদিন গড়ে ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভের শিশু ও গর্ভবতী নারীর অপুষ্টি দূর হয়। কাঁঠাল গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

চোখের জন্য কাঁঠাল : বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ। যা চোখের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান। অনেকেই জানেন না, কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো করে। এছাড়া কাঁঠাল ত্বকের বলিরেখা ও চামড়ার ভাঁজপড়া প্রতিহত করে।

হাড় মজবুত করে : পুষ্ঠিবিদরা বলছেন, কাঁঠারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা শরীরের হাড় গঠন ও হাড় মজবুত করতে ব্যাপক সহায়তা করে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায় কাঁঠাল : পাকা কাঁঠালে রয়েছে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম, যা আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস : পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, কাঁঠালে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যাপক কার্যকরী। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা নির্ভয়ে কাঁঠাল খেতে পারেন।

কাঁঠালের ওষুধি গুণাগুণ

ভেষজ চিকিৎসা গবেষকরা বলছেন, সাধারণত কাঁঠাল গাছের শেকড় হাঁপানী রোগের উপশমে কার্যকরী। কাঁঠালের শেকড় সেদ্ধ করে উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান হাপানীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া হাইপারটেনশন, অবসাদ দূর করতে পাকা কাঁঠাল খুবই কার্যকরী।

পরামর্শ : কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁঠাল পাকা ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। দেশে কাঁঠালের বিচি নানা উপায়ে রান্না করে খাওয়ার প্রচলন আছে। কাঁঠাল এমন একটি ফল, যার কোনো অংশই অব্যবহার্য নয়।

তারপরও সুস্বাদু ফল কাঁঠাল খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কাঁঠাল খাবেন। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের দিনে কাঁঠাল কম খাওয়াই ভালো। কারণ কাঁঠাল দ্রুত শরীর গরম করে দেয়।

 

এবি/এসএন

১৮ জুলাই ২০২১, ০৫:২৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।